প্রযুক্তি আশীর্বাদ, আবার প্রযুক্তিই ফাঁদ। যেমন ধরুন হিডেন ক্যামেরার কথা। আপনার জন্য হতে পারে মস্ত বিড়ম্বনা বা হয়রানির মাধ্যম। খুব সহজেই হিডেন ক্যামেরার ফাঁদে পড়ে আপনি অথবা আপনার স্বজন কিংবা আপনার সবচেয়ে প্রিয়জনটাও যে কোন সময় হতে পারে ভয়ানক বিপদের শিকার। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে একদিকে আপনি যতই বাড়াচ্ছেন সতর্কতা, প্রযুক্তির নিত্য নতুন আবিষ্কারের সুবাদে পেছনের পরিচিত কৌশল ফেলে অপরাধীরাও নতুন কৌশলে আপনাকে ফাঁদে ফেলতে আবারো কোঁমর বেধে নিচ্ছে প্রস্তুতি! সাবধানতা আর প্রয়োজনীয় সতর্কতাই একমাত্র পারে আমাদের অনাকাঙ্খিত বিপদ এবং বিব্রতকর কোন পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে রাখতে।
আসুন জেনে নেই কিভাবে নিরাপদে থাকবঃ
আজকাল হোটেল রুম, বিউটি পার্লার, পাবলিক টয়লেট কিংবা শপিং মলের চেঞ্জিং রুম- অসতর্ক থাকলে যে কোনও সময়ই আপনি হতে পারেন হিডেন ক্যামেরার (লুকানো) শিকার। তবে একটু সতর্ক থাকলে খুব সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। খুব সহজে খুঁজে নেওয়া যায়, ঘরের কোনও কোণায় গোপন ক্যামেরার অস্তিত্ব আছে কি না।
১. মার্কেটে গেলে অনেকে ট্রায়াল রুমে পোশাকের মাপ দেখেন। শরীরে পরেন এক্ষেত্রে আপনাকে সাবধান হতে হবে।খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ট্রায়াল রুম এড়িয়ে চলুন।
২. বাইরের শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। শুধু ট্রায়াল রুম নয়, শপিং মল, দোকান বা রেস্তোরাঁর শৌচাগার ব্যবহার করলেও এভাবে সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ এখানেও থাকতে পারে গোপন ক্যামেরার ফাঁদ।
৩. গোপন ক্যামেরা খুঁজে পেতে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি। অনেক ক্যামেরাতে মোশন ডিটেক্টর থাকে অর্থাৎ আপনি যেদিকে যাবেন, ক্যামেরাও সেদিকে ঘুরে যাবে। এধরনের ক্যামেরা খুঁজে পেতে প্রথমে রুমের সব জানালা দরজা বন্ধ করে পুরো রুম অন্ধকার করে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। এবার, কোন শব্দ না করে রুমে এদিক ওদিক যান যাতে করে ক্যামেরা আপনাকে ফলো করে। এবার খুব ভাল করে খেয়াল করুন ক্যামেরা আপনাকে ফলো করে ঘুরে যাওয়ার সময় কোন শব্দ হচ্ছে কিনা।।
৪. পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে নিজেদের সংযত রাখা এবং নিজের পোশাক ঠিক আছে কিনা -সেইদিকে খেয়াল রাখা। অপরিচিত কাউকে ছবি তুলতে দেওয়া উচিত না।
৫. ফেসবুকে নিজের ছবিগুলো সঠিকভাবে প্রাইভেসি দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।কারণ ফেসবুকের ছবি দিয়েও হতে পারে ভয়াবহ বিপদ।
৬. জিমের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় এবং ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহারের আগে সঠিকভাবে চেক করে নেয়া উচিত। আশপাশে পরে থাকা জিম ব্যাগগুলো চেক করে নিলে ভালো হয়। কারণ আজকাল জিম ব্যাগ নামক হিডেন ক্যামেরা বাজারে এসেছে। এতে অতি ক্ষুদ্র ক্যামেরা লাগানো থাকে।
৭. চশমা, হাতঘড়ি ও কলমের মাঝেও থাকতে পারে ক্যামেরা। তাই এক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
৮. অনেকে অভিনন্দন জানাতে ফুলের তোরার মাঝেও ছোট্ট একটা ক্যামেরা লুকিয়ে রাখতে পারে। তাই সাবধান!
৯. কোথায় কোথায় গোপন ক্যামেরা থাকতে পারে তা ভাল করে দেখুন। এছাড়াও ছাদের কোণা, দেয়ালের ছবি, ফুলের টব বা সন্দেহজনক সকল স্থান ভাল করে পর্যবেক্ষণ করুন।
১০. সাধারণত রুমের অন্ধকার স্থানগুলিতে গোপন ক্যামেরা বসানো হয়। রুমের তুলনামুলক অন্ধকার স্থানগুলো ভাল করে দেখে নিন।
১১. রুমে যদি আয়না থাকে আর তা যদি আপনার সন্দেহ হয় তাহলে আয়নার উপর একটা আঙ্গুল রাখুন। আপনার আঙ্গুল আর আয়নার আঙ্গুলের প্রতিবিম্বের মাঝখানে যদি কোন ফাক না থাকে অর্থাৎ দুটি আঙ্গুলের মাথা যদি একেবারে একটার সাথে আরেকটা লেগে থাকে তাহলে বুঝবেন এটা ডুয়েল মিরর। আর যদি মুল আঙ্গুল ও আয়নার আঙ্গুলের মাঝে একটু ফাক থাকে তাহলে এটা একটা সাধারণ আয়না হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
১২. বেশিরভাগ ক্যামেরার পাওয়ার অন করার পরপরই একটি এলইডি বাতি জ্বলে উঠে। রুম পুরোটা অন্ধকার করে কিছুটা সময় নিন যাতে আপনার চোখে অন্ধকারটা সয়ে যায়। এবার খুব ভাল করে লক্ষ্য করুন লাল, সবুজ বা হাল্কা নীল রঙের আলো কোথাও থেকে বের হচ্ছে কিনা। যদি এমনটি হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিত যে সেটা ক্যামেরা।
১৩. এর জন্য আপনার লাগবে একটা মোবাইল ফোন (অ্যাক্টিভেটেড) যেখান থেকে ফোন করা যাবে। এবার ধরুন ট্রায়াল রুমে ঢুকে আপনার মোবাইল থেকে কাউকে কল করুন। যদি কল করা যায় ও নেটওয়ার্ক থাকে- তাহলে গোপন ওই ঘরে ক্যামেরা নেই। আর যদি কল করা না যায় ও নেটওয়ার্ক হঠাৎ করে ডাউন হয়ে যায়-তাহলে অবধারিত ভাবে বুঝবেন সেখানে গোপন ক্যামেরা রয়েছে।
এছাড়াও যারা অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইফোন অপেরেটিং সিস্টেমের স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন, তাদের পক্ষে সবচেয়ে সহজ হবে গোপন ক্যামেরা সনাক্তকরণ ‘অ্যাপস’ ইনস্টল করে নিন। সেক্ষেত্রে অ্যাপসটিই আপনাকে জানিয়ে দেবে, ঘরে কোনও লুকোনো ক্যামেরা আছে কি না। তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট