ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্টদের আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। উন্নত গ্রাহক সেবার বিষয়টি এখনও পর্যাপ্ত নয়। মোবাইল ফোন অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে আরও তৎপর হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) বাংলাদেশ মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ট্যাক্স স্টাডি-এর উদ্বোধনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলন। মুঠোফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
ডিজিটাল সংযুক্তি ডিজিটাল যুগের মহাসড়ক উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতির লাইফ লাইন। এরই ধারাবাহিকতায় টেলিযোগাযোগ খাত হচ্ছে ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের মুখ্য বিষয়।
অনুষ্ঠানে জিএসএমএ টিমের জুলিয়ান গোরম্যানের উপস্থাপনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুত কুমার সরকার, জিএসএমএ টিম কর্মকর্তা জেনস বেকার এবং অ্যামটবের সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ বক্তব্য রাখেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ জাতির একটি স্বপ্ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রাথমিক কাজ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেছিলেন। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ অভাবনীয় সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি পৃথিবীতে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার এবং টেলকো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণশক্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। করোনাকালে তা প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি জানান, প্রযুক্তির আধুনিক ভার্সন ফাইভ জি ২০১৮ সালে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ফাইভ জি হচ্ছে চতুর্থ শিল্প যুগের প্রযুক্তি। ২০২১ সালের মধ্যে ফাইভ জি সেবা চালু করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী দিন হচ্ছে ডাটার যুগ। ভয়েস সার্ভিসের তুলনায় ডাটা সার্ভিসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০০৮ সালে এক এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিল ২৭ হাজার টাকা তা ২৮৫ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা টেলকো খাতের বিভিন্ন দিকে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে জিএসএমএ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের টেলিখাত নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মোবাইল টেলিযোগযোগ খাতে বাংলাদেশে ৪৪ শতাংশ কর দিতে হয়, যা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে মোবাইল সেবাদাতাদের প্রতি ১০০ টাকা রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই কর এবং নানা ধরনের রেগুলেটরি ফি হিসেবে দিতে হয়। যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যদেশগুলোর এ ধরনের গড় ফি’র প্রায় দ্বিগুণ।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দেশের অনেক নাগরিকের জন্য ২০০ টাকা সিম ট্যাক্স বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যদিও তা সাশ্রয়ী করে তোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররাই দিয়ে দেয়। এছাড়া মোবাইল সেবার ওপর মোট ৩৫ শতাংশ কনজিউমার ট্যাক্স বা ভোক্তা পর্যায়ে কর আরোপিত আছে, যা সরকারের কোষাগারে যুক্ত হয়। এর ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ।
গবেষণা বলছে, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলো এ পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশে সর্বাধিক ৯৫ শতাংশ ফোর জি নেটওয়ার্ক কাভারেজ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনও ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত। ডিজিটাল অর্থনীতিতে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ করতে না পারা ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক হতে পারে।