১০ বছর ধরে উইন্ডোজের লাইট ভার্সন তৈরির চেষ্টা করে আসছিল মাইক্রোসফট। গুগল ক্রোমের ওএসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উইন্ডোজ ১০এক্স নামে ওই অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু তাদের উইন্ডোজ ১০ নবায়নের নাম করে লাইট ওই ভার্সন তৈরির কাজ বন্ধ করে দিল মাইক্রোসফট। খবর দ্য ভার্জ।
করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে সর্বশেষ একটি পাবলিক ইভেন্টে উইন্ডোজ ১০এক্স নিয়ে আসার বিস্তারিত পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল মাইক্রোসফট। সারফেস দিও ও সারফেস নিওর পাশাপাশি উইন্ডোজ ১০এক্স ফ্ল্যাগশিপের মাধ্যমে অপারেটিং সিস্টেমে নতুন দিগন্ত সূচনার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এমনকি গুগলের ক্রোম ওএসের সঙ্গে টেক্কা দেবে বলে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং সিঙ্গেল স্ক্রিন ডিভাইসের ওপর জোর দেয়ায় আলোর মুখ দেখছে না উইন্ডোজ ১০এক্স।
পেত্রির বরাতে দ্য ভার্জ জানায়, চলতি বছর উইন্ডোজ ১০এক্সের কোনো শিপিং হচ্ছে না। সিঙ্গেলস্ক্রিন ল্যাপটপের জন্য উইন্ডোজ ১০এক্স অপারেটিং সিস্টেম আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে মাইক্রোসফট।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজে ক্রোমবুকসকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে আসছিল মাইক্রোসফট। কিন্তু গত এক বছরে কোম্পানিটি তাদের স্বাভাবিক উইন্ডোজ ল্যাপটপের চাহিদায় বড় আকারের উল্লম্ফন দেখতে পায়। বৈশ্বিক চিপ সংকট সত্ত্বেও মহামারীকালীন পিসি বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি বরং রেকর্ড সর্বোচ্চ ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ বিক্রি হয়। ওই পিসিগুলোর সঙ্গে উইন্ডোজ বিক্রি থেকে আয় বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে মাইক্রোসফট। সর্বশেষ প্রান্তিকে মার্কিন এ প্রযুক্তি জায়ান্টটির উইন্ডোজ ওইএম বিক্রি থেকে আয় ১০ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে উইন্ডোজ নন-প্রো ওইএম থেকে আয় বেড়েছে ৪৪ শতাংশ।
মাইক্রোসফট বলছে, বর্তমানে বিশ্বে উইন্ডোজ ১০-এর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩০ কোটি ছাড়িয়েছে। বিশাল এ বাজার শেয়ারকে সামনে রেখে মাইক্রোসফট নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আসার চেয়ে বিদ্যমান অপারেটিং সিস্টেমে জোর দিতে চাচ্ছে। উইন্ডোজ ১০-এর ইউজার ইন্টারফেস আরো উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে তারা। ফাইল এক্সপ্লোরার উন্নত করার পাশাপাশি ১৯৯৫ সালের দিকে শুরু হওয়া উইন্ডোজের আইকনগুলো পরিবর্তনও করতে যাচ্ছে মাইক্রোসফট। চলতি বছরের শুরুতেই উইন্ডোজ ১০-এ বড় আকারের পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছিল। তারা বলছিল, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে উইন্ডোজ ১০-এ ওই পরিবর্তনগুলো আনা হতে পারে।
যারা প্রতিদিনই উইন্ডোজ ব্যবহার করে, তাদের স্বার্থে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমেও পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে মাইক্রোসফট। এক্সবক্স অটো এইচডিআরসহ ব্লুটুথ অডিও উন্নত করতে যাচ্ছে তারা।
স্পষ্টত, উইন্ডোজকে সহজ করতে এক দশকেরও বেশি সময়ের প্রচেষ্টা শেষে মাইক্রোসফট তার মূলে ফিরে যাচ্ছে। ২০১২ সালে প্রথম যাত্রা করেছিল উইন্ডোজ আরটি। তারপর ২০১৭ সালে উইন্ডোজ ১০এস নিয়ে আসে তারা। কিন্তু উভয় অপারেটিং সিস্টেমই উইন্ডোজে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। তবে উইন্ডোজ ১০এক্সে আকর্ষণীয় কিছু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবে গেল।