‘ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি ডে’ উপলক্ষে ‘অ্যাকসেলেরেটিং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ডিউরিং চ্যালেঞ্জিং টাইমস’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে গ্রামীণফোন এবং দ্য ডেইলি স্টার। আজ অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে ডিজিটাল রূপান্তরের গুরুত্ব এবং ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবধান দূরীকরণে ডিজিটাল ট্রান্সফরম্যাশনের ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
ওয়েবিনারে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বক্তারা কোভিড-১৯ উদ্ভূত পরিবর্তিত ও নিউ নরমাল অবস্থায় আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম চলমান রাখতে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রযুক্তিখাতের নেতৃবৃন্দ বলেন ‘এখনই’ সময় পরিবর্তনকে গ্রহণ করার এবং নতুন বিশ্ব সৃষ্টির, যেখানে কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত বাংলাদেশ তৈরির যাত্রাকে ত্বরাণ্বিত করতে প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেছে সারাবিশ্ব। বক্তারা বলেন, টেকসই ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য কৌশল তৈরিতে সরকার ও বেসরকারি খাত উভয়েরই এগিয়ে আসা উচিৎ।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। ওয়েবিনারে ‘অ্যাকসেলেরেটিং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ডিউরিং চ্যালেঞ্জিং টাইমস’ বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়নের (আইটিইউ) রিজিওনাল ডিরেক্টর আতসুকো ওকুদা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত সিইও এবং চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অফিসার সোলায়মান আলম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী; বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর; ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেন; মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল; আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মোমিনুল ইসলাম; এবং সেবা এক্সওয়াইজেড’র প্রধান নির্বাহী আদনান ইমতিয়াজ হালিম ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ওয়েবিনারে সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশার।
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়নের (আইটিইউ) রিজিওনাল ডিরেক্টর আতসুকো ওকুদা কানেক্ট ২০৩০ এজেন্ডার ওপর আলোকপাত করে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আইসিটি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের উন্নত বিশ্বে সবাইকে সংযুক্ত করার বৈশ্বিক লক্ষ্যই হচ্ছে কানেক্ট ২০৩০ এজেন্ডা। মূলপ্রবন্ধে ওকুদা পরিকল্পনার পাঁচটি কৌশলগত লক্ষ্য এবং ডিজিটাল সহযোগিতার আটটি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও, তিনি বৈশ্বিক আইসিটি সূচকের সামগ্রিক ধারণা, ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের অর্জন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের হার, আইসিটি উন্নয়ন ত্বরাণ্বিত করার বিভিন্ন ক্ষেত্র ও এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, আইটিইউ’র বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা সূচক, ই-গভর্নমেন্ট সমীক্ষা, গিগার মাধ্যমে স্কুলগুলোকে সংযুক্ত করা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্ট বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি, তিনি ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বিষয় তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
মূলপ্রবন্ধের পরে আইটিইউ ঘোষিত ‘কানেক্ট ২০৩০ এজেন্ডা’র পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আলোকপাত করে বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল রূপান্তরের বিভিন্ন প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেন। আশা করা হচ্ছে, ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞদের মতামত দেশের আইসিটি খাতের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করবে এবং নানা প্রতিকূলতা শনাক্তের মাধ্যমে নিউ নরমাল পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে মোকাবিলায় অংশীজনদের সহায়তা করবে।
ওয়েবিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় আইসিটি খাতে বাংলাদেশ অভুতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ডিজিটাল বিশ্বের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে আমাদের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে অংশীদারিত্বে তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি কোভিড-১৯ এর মতো সঙ্কট মোকাবিলায় ডিজিটাল রূপান্তর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের আর্থ-সামাজিক সকল কার্যক্রম চলমান রাখতে আমাদের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে অবদান রেখে চলেছে। একসাথে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি; তবে, আমাদের এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। একসাথে কাজের মাধ্যমে আমরা এ সঙ্কটকালীন সময়ে টেকসই উপায় খুঁজে পাবো। আমরা এখন এক নতুন বিশ্বের অংশ যেখানে আগের মতো সরাসরি অনেক কিছুই করা যাবে না; তাই, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষকে সহায়তার এখনই সময়।’
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক আগেই ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছে। এজন্য, আমরা সুফলও ভোগ করছি। বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন এটা আরও স্পষ্ট হয়েছে এবং একইসাথে ডিজিটাল রূপান্তরে আমাদের প্রচেষ্টা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। তাই, কানেক্ট ২০৩০ এজেন্ডা আর সরকারের ২০৪১ লক্ষ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা এসডিজি লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল রূপান্তরের সর্বোচ্চ সুবিধা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এমতাবস্থায়, নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতে আমরা টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোতে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’
গ্রামীণফোন লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত সিইও এবং চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি অফিসার সোলায়মান আলম বলেন, ‘১০ কোটিরও বেশি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিয়ে আমরা দ্রুত ও দৃপ্ত পদক্ষেপে ডিজিটাল রূপান্তর এবং কানেক্টেড ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি পার্টনার হিসেবে সকল ক্ষেত্রে সবার জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের শতভাগ নেটওয়ার্ক উচ্চগতির ফোরজি কাভারেজ সক্ষম করে তোলার ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছি। কানেক্টিভিটির বিস্তৃতি এবং এর সুবিধা সব জায়গায় নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের তরুণদের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ফলে, তারা ভবিষ্যতের নতুন রূপদান করতে পারবে। আমাদের শুধু এটা নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যেনো তাদের সঠিক টুলের মাধ্যমে সঠিক মানসিকতায় প্রস্তুত করে তুলতে পারি।’