২০২১ সালের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল সরকার বাস্তবায়নে ২ হাজারের অধিক ডিজিটাল সেবা একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে নাগরিকের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দিতে ‘একসেবা-সরকার’ কাঠামো তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আইসিটি টাওয়ারে এটুআই সম্মেলন কক্ষে সরকারি দপ্তরসমূহের প্রতিনিধি ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক ঠিকানায় সকল ডিজিটাল সেবা ‘একসেবা-সরকার’ কাঠামো বিষয়ক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর সচিব এন এম জিয়াউল আলম; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এর অতিরিক্ত সচিব (সংস্কার অনুবিভাগ) সোলতান আহ্মদ এবং সভাপতিত্ব করেন এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।
এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি এবং উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব।
এটুআই এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরফে এলাহী ‘একসেবা-সরকার’ কাঠামো সম্পর্কে বিভিন্ন দিক বিস্তারিত ভাবে উপস্থাপন করেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে ২,০০০+ ডিজিটাল সেবা তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ‘বিগ ব্যাঙ ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন’ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। পরিষেবায় পরিবর্তন আনতে সেবা প্রদান ও ব্যবহারের গতানুগতিক পদ্ধতিগুলোকে একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে এটুআই, ইন্ডাস্ট্রি ও সরকারের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার কৌশলকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি এটুআই-এর নেওয়া এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে বেগবান করবে। একই সাথে সরকার ও নাগরিক উভয়ের জন্য সেবা গ্রহণ এবং ব্যবহার সহজতর করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশীয় প্রযুক্তি পণ্যকে উৎসাহিত করতে চাই এবং সেজন্য দেশীয় ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ‘একসেবা-সরকার’ প্রণীত নীতিমালা ও ধারণাসমূহ একটি টেকসই দেশীয় সফটওয়্যার উন্নয়ন ব্যবস্থা এবং সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে বারবার সিস্টেম গবেষণা ও তৈরির সময় বাঁচাবে এবং সময়মত গুণগত সফটওয়্যার তৈরি করতে সহায়তা করবে, যা “কাস্টমার সন্তুষ্টি” বৃদ্ধি করবে এবং নতুন নতুন ব্যবসায়িক ক্ষেত্র তৈরি করবে।’
ইন্ডাস্ট্রি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার ও এন্টারপ্রাইজ টেকনোলজি বিষয়গুলোতে গবেষণামূলক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান মন্ত্রী এবং একসেবা-সরকার প্লাটফর্মের মাধ্যমে সরকার পেপারলেস সরকারি অফিস গড়তে সক্ষম হবে বলে জানান।
অন্যদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ‘কানেক্টেড গভর্নমেন্ট-এর ধারণা মাথায় নিয়েই ‘একসেবা-সরকার’ তৈরি করা হয়েছে যেটা সরকার ও নাগরিককে ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করতে এবং সেবা পেতে সহায়তা করবে। এই উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম ডিজিটাল সল্যুশন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে মানসম্মত, কার্যক্ষম ও টেকসই সল্যুশন তৈরিতে সহায়তা করার পাশাপাশি সরকারের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনকে ত্বরান্বিত করবে।’
উল্লেখ্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএসএইড ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর সহায়তায় এটুআই এই একক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে নাগরিকের সেবাগুলোকে সহজ করার পাশাপাশি সরকারের সেবা প্রদান প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেবা প্রদানকারীর এই একক প্ল্যাটফর্মটিকেই বলা হচ্ছে ‘একসেবা-সরকার’ কাঠামো। জনগণ যাতে সহজে, স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে প্রযুক্তির সহয়তায় নির্বিঘ্নে সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারে এবং সরকারি দপ্তরসমূহ যাতে সহজে স্বল্প সময়ে সঠিকভাবে সেবা প্রদান করতে পারে এর জন্য গতানুগতিক ধারার ই-সেবা তৈরির পরিবর্তে নির্দিষ্ট মান ও কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনুসরণ করা হচ্ছে।
অসংখ্য ডিজিটাল সেবার ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার সহজতর করার জন্য এই একক কাঠামো তৈরি হচ্ছে। যেখানে একজন কর্মকর্তা একটি ঠিকানা থেকে তার জন্য প্রযোজ্য সেবায় প্রবেশ করতে পারবেন ও সেবা দিতে পারবেন। একইভাবে একজন নাগরিক একটি একক ঠিকানায় গিয়ে তার জন্য প্রযোজ্য সকল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এই কাঠামোর প্রশংসা করেন ও সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ ও প্রযুক্তি নির্ভর ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিবৃন্দ।