এশিয়ার স্মার্টফোনে খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে হুয়াওয়ের অপারেটিং সিস্টেম হারমনিওএস। সম্প্রতি এ অপারেটিং সিস্টেম নতুন আপডেট এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে হুয়াওয়ের নিজস্ব স্মার্টফোন ছাড়াও অন্যান্য স্মার্ট পণ্যেও এ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে। তবে বৈশ্বিকভাবে এ অপারেটিং সিস্টেম বাজারজাতের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানায়নি চীনের এ বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। খবর বিবিসি।
গত বছর হুয়াওয়ের সঙ্গে প্রযুক্তি পণ্যের বাণিজ্য বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। জিমেইলের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দেয়ায় হুয়াওয়ে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের সঙ্গে কাজ করার সুবিধা হারায়।
তবে হুয়াওয়ে হারমনি অপারেটিং সিস্টেমকে অ্যান্ড্রয়েডের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মানতে নারাজ। বর্তমানে বিশ্বের ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ হ্যান্ডসেট অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। আর বাকি ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ হ্যান্ডসেট অ্যাপলের আইওএসে পরিচালিত। আইডিসির এক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও বাজারে থাকা স্যামসাংয়ের টাইজেন এবং অ্যামাজনের ফায়ার অপারেটিং সিস্টেম বাজারে নিজেদের অবস্থা তৈরি করতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত কিছু স্মার্ট টিভিতে হারমনি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারে সামগ্রিক কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি। তবে তাদের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করা হয়েছে।
অ্যান্ড্রয়েডের সাম্রাজ্যের হুমকি হারমনি ওএস
প্রযুক্তি বাজারে গুঞ্জন চলছিল যে বাজারে নতুন পণ্য আনতে যাচ্ছে হুয়াওয়ে। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে নতুন কোনো স্মার্টফোন আনেনি হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে হারমনি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহূত ট্যাবলেট, স্মার্ট স্পিকার এবং টেলিভিশনের উন্নয়ন ও বাজারজাত করা।
সিসিএস ইনসাইটের প্রধান গবেষক বেন উড বলেন, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি বাজারে যেসব পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে শক্ত অবস্থা সৃষ্টিতেই হারমনি অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন করা হয়েছে এবং হুয়াওয়ে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অ্যাপল যেভাবে নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে প্রযুক্তি বাজারে নিজেদের অবস্থান সৃষ্টি করেছে, হুয়াওয়েও সে রকম কিছুরই আশা করছে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম ঝিনহুয়া নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ শেনজেনভিত্তিক এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হারমনি অপারেটিং সিস্টেম সংবলিত ৩০ কোটি ডিভাইস উৎপাদন করতে পারবে।
বিবিসি চায়নার মিডিয়া গবেষক কেরি অ্যালেন বলেন, চীনের অভ্যন্তরে এ অপারেটিং সিস্টেমের ডিভাইস বাজারজাত নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুয়াওয়ের নতুন অপারেটিং সিস্টেমের প্রচারণা চালাচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট ইউথ লিগ থেকে শুরু করে, দমকলকর্মী এবং আদালতে কর্মরতরা। গত সপ্তাহে ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ওয়েইবো ব্যবহারকারী দ্য হারমনি স্মার্টফোন সিস্টেম ইজ হেয়ার হ্যাশট্যাগযুক্ত পোস্ট পড়েছেন বলে জানা গেছে।
হারমনি ওএস এর বিশেষত্ব: কেন একে বৈপ্লবিক বলা হচ্ছে?
একটু আগেই বলা হলো হারমনি ওএস এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যাকে যেকোনো রকম ডিভাইসে ব্যবহার করা সম্ভব। একে হুয়াওয়ের ভবিষ্যতের প্রতি চূড়ান্ত রকমের দূরদর্শিতার একটি নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
হারমনি ওএস এমন এক কনসেপ্টকে সত্যি করে দেখালো যেটি অন্য কেউ এখনও পুরোপুরিভাবে সম্ভব করতে পারেনি। আর সেটি হলো ‘One Operating System For Every Device’ অর্থাৎ সকল প্রকার ডিভাইসের জন্য একটিমাত্র অপারেটিং সিস্টেম! সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী গুগলও একই ধারণাকে সামনে রেখে ‘ফিউশিয়া’ নামক একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেমের উপর কাজ করছে, যেটা কবে নাগাদ বাজারে আসবে তা এখনও অনিশ্চিত।
সুতরাং হুয়াওয়েই হলো প্রথম কোম্পানি যারা এই নতুন ধারা বাস্তবায়ন করলো এবং সামনে যত প্রকার অপারেটিং সিস্টেম আসবে, সবগুলোই এই ধারা অনুসরণ করবে। এর অন্যতম কারণ হলো যত দিন যাচ্ছে আমরা ততই মাল্টিপল ডিভাইস ব্যবহার করছি এবং শুধু মাল্টিপল ডিভাইস থাকলেই হয় না, এই ডিভাইসগুলোকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে পরস্পরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়।
চিন্তা করুন, আপনি হয়তো আপনার সাথে একটি স্মার্টওয়াচ কিংবা হেলথ ট্র্যাকার পরে আছেন, যেটি কি না আপনার ফোনের সাথে সংযুক্ত এবং সর্বক্ষণ এরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে। আবার আপনার বাসার যে স্মার্ট টিভি আছে, সেটাও আবার আপনার ফোন কিংবা ল্যাপটপের সাথে সংযুক্ত। এগুলো একসাথে সংযুক্ত থাকে বলেই আপনি চাইলে আপনার হাতের স্মার্টওয়াচ দিয়ে ফোনের অনেক ফাংশন ব্যবহার করতে পারেন; আবার আপনার বাসার স্মার্ট টিভিকে আপনি আপনার ফোন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও আরো বহু রকমের কাজ করতে পারেন। যদি এই ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত না হতে পারতো কিংবা একে অন্যের সাথে কথা বলতে না পারতো তাহলে কি আপনি এই সুবিধা গুলো পেতে পারতেন? কখনোই না!
এভাবে সময় যত সামনে গড়াচ্ছে ততই মানুষ মাল্টিপল ডিভাইসকে একটা নেটওয়ার্কে এনে একসাথে সমন্বয় করে ব্যবহার করছে, যেটাকে অনেক সময় ইকো-সিস্টেম বলে অবিহিত করা হয়। আর ৫/৭ বছর পর যখন ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) কিংবা এআইওটি-এর মতো চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবভিত্তিক প্রযুক্তিগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে তখন শত-শত, হাজার-হাজার রকমের ডিভাইসকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে একযোগে কাজ করতে হবে! তাহলে ভবিষ্যত চাহিদা কি আপনি একটু হলেও কল্পনা করতে পারছেন?