বাতাস থেকে অল্প খরচে প্লান্ট তৈরী করে অক্সিজেন উৎপাদন করেছে ঈশ্বরদীর সরকারি এস এম হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র তাহের মাহমুদ তারিফ। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তারিকের গবেষণা সফলতা অর্জন করেছে। তারিকের আবিস্কৃত প্লান্টের অক্সিজেন ল্যবরোটারি টেষ্টের পর বৃহত্তর পরিসরে কম খরচে দেশে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদনের সম্ভাবনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদে তারিকের আবিস্কৃত প্লান্টে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের বর্ণনা দেয়া হয়। এসময় ইউএনও পি এম ইমরুল কায়েস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার ও স্কুলের অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থী তারিক জানায়, প্রায় বছরাধিক সময় আগে তার বাবা মৃত্যুর সময় অক্সিজেনের সমস্যায় পড়ে। তাছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়কে মাথায় নিয়ে সে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য গবেষণায় নেমে পড়ে। সে ডায়ানামা দিয়ে বাতাসকে প্রথমে একটি সিলিন্ডারে প্রবেশ করায়। বাতাসে অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকায় সেগুোলা বের করার জন্য সে জিওলাইট ব্যবহার করে। জিওলাইটের মাধ্যম বাতাস থেকে অক্সিজেনকে এক দিক দিয়ে এবং অন্যান্য উপাদানকে আরেকদিক দিয়ে বের করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সে কম করচে প্লান্ট তৈরী করেছে।
তারিক জানায়, প্লান্ট তৈরীতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৯৫-১০০%। এইমাত্রা ৯৩%-র কম হলে সতর্ক হতে হয় এবং ৯২%-র কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন দেয়া হয়। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০/৯১ এ নেমে এসেছিল, ইতোমধ্যেই এরকম কয়েকজনকে এই অক্সিজেন দিয়ে লেভেল ৯৮-৯৯ এ উঠাতে সমর্থ হয়েছে বলে তারিক জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেষ্টেও সফলতা আসবে বলে তারিক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার জানান, তারিকের এই কাজে আমরা সকলেই উৎসাহ-উদ্দিপনা দেই। এখন ল্যাব টেষ্ট বাকি। ল্যাব টেষ্টে দেখতে হবে, তারিকের আবিস্কৃত প্লান্টে উৎপাদিত অক্সিজেনের মধ্যে বাতাসের অন্য কোন উপাদান আছে কিনা।
তারিকের স্কুলের অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলাম জানান, সে অত্যন্ত মেধাবী। পিতৃহীন দরিদ্র এই শিক্ষার্থীর মেধা দেখে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই তার পশে আছি। কম খরচে আবিস্কৃত তার এই প্লান্টে উৎপাদিত অক্সিজেন ল্যাব টেষ্টে অবশ্যই অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।
উপজলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, অক্সিজেন ঘাটতি ও এর জরুরী প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় নিয়ে অল্প খরচে প্ল্যান্ট তৈরি করেছে সরকারি এস এম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্র্রেণির শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কম খরচে প্লান্ট তৈরীতে সহযোগিতা এবং আমরা তাকে উৎসাহ দিয়েছি।
তারিকের অক্সিজেন ল্যাব পরীক্ষার জন্য ঢাকা, ইসলামী ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছে। ল্যাব টেষ্টে এই অক্সিজেন উৎরে গেলে বৃহত্তর পরিসরে বড়ো প্লান্ট তৈরী করে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন দেশেই কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।