ফেসবুকে আরও উন্নতমানের ভিডিও কনটেন্ট আপলোড এবং মানুষ কে ধরে রাখতে সেরা ক্রিয়েটরদের এক বিলিয়ন ডলার বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। গত ১৪ জুলাই বুধবার নিজ প্রোফাইলে পোস্ট দিয়ে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের ক্রিয়েটরদের জন্য এ ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। সেরা ক্রিয়েটররা ২০২২ সালে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। যেসব ক্রিয়েটররা ফেসবুকে এস্টাবলিশ হতে চায় তাদেরকে সীড ফান্ড দেবে ফেসবুক।
ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতারা ফেসবুকে তা শেয়ার করে আয় করতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। পোস্ট, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার, চ্যাটিং করে সময় কাটানোর পাশাপাশি ভিডিও শেয়ার থেকে আয় করতে পারে ক্রিয়েটররা। যারা ফেসবুকে ভিডিও দেখে থাকেন ভিডিও শুরু হওয়ার পূর্বে এবং মাঝে বিজ্ঞাপন দেখার অভিজ্ঞতা নিশ্চই আছে। সেই বিজ্ঞাপনের আংশিক আয়ের ভাগ পায় ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতারা।
ভিডিও নির্মাতাদের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে আয়ের সুযোগ দিচ্ছে ফেসবুক এবং ইন্সট্রাগ্রাম। নিজেদের আগ্রহ, দক্ষতা, জ্ঞান, সৃজনশীলতাকে কে কাজে লাগিয়ে ভিডিও নির্মাতারা নিজের পরিবার-বন্ধু সহ অনুসারীদের সাথে শেয়ার করতে পারে নির্মিত ভিডিও বা লাইভ। এতে বহিঃপ্রকাশ পায় তাদের নতুন নতুন আইডিয়া চিন্তা ও আইডিয়া গুলো।
ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করে ব্যবহারকারীদের দেখাতে পারলেই আয় করা সম্ভব হবে না। এরজন্য অনুসরণ করতে হবে ফেসবুকের নিয়মনীতি। ফেসবুক প্রোফাইল এবং গ্রুপে আপলোড করা ভিডিও গুলো আয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ শুধু মাত্র ”পেজের ভিডিও” গুলোতে মনিটাইজেশন দিয়ে থাকে।
ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করে যারা আয় করার স্বপ্ন দেখবে তাদের কে প্রোফাইল থেকে কনভার্ট হতে হবে ফেসবুক পেজে। মনিটাইজেশন এক্সপার্টরা এ ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ দিয়েছে, তাদের মতে ফেসবুক একাউন্টে টু ফেক্টর ভেরিফিকেশন থাকা শ্রেয়। নাম এবং ইউজার নাম সাথে সাথে আপডেট করা করা উত্তম। ইন্সট্রাগ্রামেও টু ফেক্টর সিকিউরিটি চালু করে নিতে হবে। এরপর ফেসবুক পেজ এবং ইন্টস্ট্রাগ্রাম প্রোফাইল একসাথে সংযুক্ত করে নেওয়া ভালো। এতে সময় বেচে যাবে অর্থাৎ একই সময় একই পোস্ট উভয় প্লাটফর্মে প্রকাশ হবে। নতুবা উভয় প্লাটফর্মে দেখাতে চাইলে আলাদা পোস্ট দিতে হবে। কেউ চাইলে পেজের ভিডিও টেমপ্লেটের এপ্লাই করতে পারবে।
মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করতে এ শর্ত গুলো পূরণ করতে হবে। ক. ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে। খ. ফেসবুকের মনিটাইজেশন পার্টনার স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে হবে। গ. ফেসবুক পেজে যেসব কনটেন্ট শেয়ার করা হয় তা ইউনিক হতে হবে। এসব শর্ত পূরণের পর পেজে সর্বনিম্ন ১০ হাজার ফলোয়ার থাকতে হবে। সর্বশেষ ৬০ দিনে ফেসবুক লাইভ এবং অন ডিমান্ড ভিডিও সহ ৬০০,০০০ মিনিট অর্গানিক ভিউ থাকতে হবে। তবে বুস্ট, ক্রস পোস্ট বা পেইড ভিউ মিনিট গ্রহণযোগ্য নয়। কমপক্ষে ৫ টি ইউনিক এবং ৩ মিনিটের ৩ টি ভিডিও কনটেন্ট থাকতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মনিটাইজেশন দেওয়া হয় না। ফেসবুক ব্যবহারে অনুমোদিত দেশ হতে হবে।
লাইভ বা অন ডিমান্ড ভিডিও গুলো আপলোড করে কয়েক ভাবে ফেসবুক থেকে আয় করতে পারে-
ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন : ভিডিও শুরু হওয়ার পূর্বে অথবা ভিডিও চলাকালীন সময়ে যে বিজ্ঞাপন প্রচার হয় সেটাই ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন। বর্তমানে লাইভেও ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন চালানো যায়। লাইভের মাধ্যমে নিজের ফ্যান-ফলোয়ারদের সাথে দীর্ঘ সময় সংযুক্ত থাকা যায়। তাই লাইভে ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন বসানোর মাধ্যমে নিশ্চিত ভাবে আয়ের সুযোগ দিয়েছে ফেসবুক। এ পদ্ধতি মোট আয়ের ৭৫% পর্যন্ত ভূমিকা রাখে। এটি ফেসবুক থেকে আয়ের সবচেয়ে ভালো উৎস। ২০২০ এর মে এর তুলনায় ২০২১ এর মে এর সমিকরণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অনলাইন পেইড ইভেন্ট : এক্সপার্ট বা ট্রেইনারদের জন্য অনলাইন পেইড ইভেন্টের সুযোগ দিয়েছে ফেসবুক। হোস্ট/ট্রেইনার অনলাইন পেইড ইভেন্টের পোস্ট দিয়ে থাকে। আগ্রহী ব্যক্তিরা অগ্রিম ফি প্রদান করে সেই ইভেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করে।
ব্র্যান্ড ডিল : বিভিন্ন কোম্পানী তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে মানুষ কে জানানোর জন্য বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। প্রচার মাধ্যম হিসেবে বেচে নেয় টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বিলবোর্ড, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ ওয়েবসাইট ইত্যাদি। তবে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি বেচে নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে টার্গেট কাস্টমারদের কাছে পৌছতে পারে ব্র্যান্ড গুলো। ফেসবুকে যেসব পেজ গুলোর ফলোয়ার সংখ্যা বেশি সেগুলো ব্র্যান্ড সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভিডিওর শুরু, মাঝে এবং শেষ অংশে ছবি বা কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও প্রদর্শন করাতে পারে। এই ডিলে ফেসবুকের কোন উপস্থিতি থাকে না।
ফ্যান সাবক্রিপশন : ফ্যাসিফিক পেজ গুলো থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়ার জন্য ফি প্রদান করে থাকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। এর ফলে তারা কল টু একশন বা এসএমএসের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করে। সাবক্রিপশন পদ্ধতি বিভিন্ন প্যাকেজে হয়ে থাকে।
ফেসবুক স্টার : বিভিন্ন সময় ফেসবুকে তারকাদের লাইভ দেখা যায়। বিশেষ করে কোভিড সময়ে। তারা ফলোয়ারদের বিভিন্ন ভাবে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করে। লাইভ চলাকালিন মুহূর্তে মাঝে মাঝে কমেন্ট পড়ে শুনায়, ভার্চুয়ালি গিফট দেয় ইত্যাদি। এর বিনিময়ে দর্শক লাভ রিয়েক্ট বা স্টার দিয়ে থাকে। যুক্ত রাষ্ট্র সহ বিশ্বের কিছু দেশে অর্থ প্রদান করে স্টার ক্রয় করতে হয় ফেসবুক ব্যবাহরকারীদের। প্রতি স্টারের বিনিময়ে পেজ কর্তৃপক্ষ পায় ০.১ ডলার।
অনলাইন পেইড ইভেন্ট এবং ফ্যান সাবক্রিপশনের জন্য ক্রিয়েটরদের থেকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অন্তত ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত কোন কমিশন বা আয় গ্রহণ করবে না।
ফেসবুক কে ক্রিয়েটরদের জন্য সেরা প্লাটফর্ম করতে চায় প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখছেন ক্রিয়েটরদের বিলিয়ন ডলার বোনাস দেওয়ার ঘোষণা ফেসবুকের জন্য নতুন নয়।
লেখক
মোঃ দেলোয়ার হোসন, প্রতিষ্ঠাতা- আওয়ার শেরপুর।