রাশিয়ার সাইবার সিকিউরিটি শিল্পে নতুন আঘাত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মোট চারটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও দুটি অন্য প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তিসহ আক্রমণাত্মক ও ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে ওয়াশিংটন। এসবের জন্য রাশিয়া সরকারকেও দায়ী করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত এপ্রিলে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন পায় এ ছয়টি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল এবং রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সহায়তা করছিল। বিষয়টি নজরে আসার পর এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এর অর্থ হলো, প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স ছাড়া আর যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিক্রি করতে পারবে না। এ লাইসেন্স খুব কমই ইস্যু করা হয়।
এ ঘোষণা এলো মূলত এপ্রিলের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় মস্কো হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে বা হ্যাক করার চেষ্টা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছিল, তারই শাস্তি হিসেবে। যদিও শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেডারেল স্টেট অটোনোমাস ইনস্টিটিউশন মিলিটারি ইনোভেটিভ টেকনোপলিস এরা, জেএসসি পজিটিভ টেকনোলজিস, এসভিএ ইত্যাদি। এর মধ্যে এরা একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি পার্ক, যা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে। পাসিট একটি তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান, যা রাশিয়ার বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সাইবার হামলাগুলোকে সহায়তা করে। এসভিএ নামের প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান না বিভিন্ন আক্রোশপূর্ণ সাইবার হামলাকে সহায়তা করে। রাশিয়াভিত্তিক আইটি সিকিউরিটি ফার্ম হলো নিওবিট।
পজিটিভ টেকনোলজিস জানিয়েছে, বাণিজ্য বিভাগের ঘোষণায় নতুন কোনো তথ্য নেই। আর সেটি হলো প্রতিষ্ঠানটি সুরক্ষা সম্প্রদায়ের সঙ্গে পেশাগত তথ্যের নীতিগত বিনিময়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। পাশাপাশি কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পরিকাঠামোতে হামলার সঙ্গে জড়িত হবে না।
এছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য পায়নি রয়টার্স। কারো কারো সঙ্গে যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি, আবার কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
রাশিয়ার প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলোর বিষয়ে কয়েক মাস ধরেই কাজ চলছে। যেদিন ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত হলো, এরপর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন ডিমারস সাংবাদিকদের বলেন, আরো বেশকিছু রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সেগুলোর কর্মকাণ্ডও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মূলত রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে কিনা সেসব দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কিনা। এমনকি রাশিয়ান মালিকানাধীন নয়, কিন্তু সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নজরদারি ও মূল্যায়নের আওতায় আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ বলছে, তারা যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে, সেগুলো দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বা বৈদেশিক নীতি স্বার্থের বিরোধী। মূলত সে কারণেই এসব বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে।