করোনার অতিমারির কারণে পড়াশোনা ও ক্লাসের বিষয়টিও সম্পূর্ণ অনলাইন হয়ে যাওয়ায়, ল্যাপটপ-ডেস্কটপ ও স্মার্টফোনের পর্দায় চোখ রাখার প্রবণতা আরও বেড়েছে। এসব যন্ত্র থেকে যে নীল রশ্মি বের হয়, তা চোখের জন্য ভীষণই ক্ষতিকর। ফলে চোখ লাল হয়ে পানি পড়া, চোখে আর ঘাড়ে ব্যথা সঙ্গে চোখে চুলকানি ও চোখে করকর করছে কিছু একটা, এমন একটা ভাব।
এই সমস্যার নাম ‘সিভিএস’ অর্থাৎ ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’। এই ব্যাপারটা খুব গুরুতর নয় ঠিকই কিন্তু লাগাতার সমস্যায় দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
চিকিৎসকদের পরামর্শে কয়েকটা নিয়ম মেনে চললেই কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোমের হাত এড়ানো যায়।
প্রায়শই যদি মাথা ধরে যায়, তা হলে বুঝবেন এক টানা এই কম্পিউটার বা মোবাইলের পরদায় তাকিয়ে থাকার জন্যই এই সমস্যা হচ্ছে। অনেকের আবার ‘ড্রাই আই’ বা চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। দীর্ঘ ক্ষণ পর্দায় চোখ রাখলে চোখ চুলকোতেও পারে। এক নাগাড়ে তাকিয়ে কাজ করার ফলে চোখের পেশিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রাতে ঘুমের সমস্যাও হতে পারে।
কী করলে অস্বস্তি কমবে
বরফ ঠান্ডা পানি বা দুধে তুলো ডুবিয়ে নিয়ে চোখের পাতার উপর মিনিট পাঁচেকের রাখলে চোখে আরাম পাবেন।
চোখের চাপ কমাতে আপনার হাতই যথেষ্ট! আগে হাত দুটো খুব ভাল করে ঘষে গরম করে নিন। এবার সেই গরম তালুর অংশ চোখের উপর রাখুন। বড় শ্বাস নিন ও নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। ঘুমের সমস্যা কমবে এই উপায়ে। তবে সবার আগে হাতে পরিষ্কার করে নেবেন।
দিনের মধ্যে অন্তত পাঁচবার চোখে পানির ঝাপটা দিন, এতে চোখ আরাম পাবে।
চোখ ভাল রাখতে গেলে করতে পারেন প্রাণ মুদ্রা। এই মুদ্রা করার জন্য শিরদাঁড়া সোজা করে পদ্মাসনে বসুন। কোলের উপর হাত রাখুন। হাতের তালু থাকবে উপরের দিকে। হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সঙ্গে কনিষ্ঠা ও অনামিকার অগ্রভাগ জুড়ে রাখুন। এবার ধ্যান করার ভঙ্গিতে চোখ বন্ধ করুন। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস রেখে মিনিট পনেরো এই ভঙ্গিতে থাকলে চোখের চাপ ও জ্বালা ভাব কমবে।
কম্পিউটার ও মোবাইলের স্ক্রিন যেন অতিরিক্ত উজ্জ্বল না হয়, আলো কমিয়ে রাখুন। স্ক্রিন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সঠিক ভঙ্গিমায় বসে কাজ করতে হবে। কম্পিউটারের মনিটরের উপরের দিক চোখের সোজাসুজি থাকলে ভাল হয়। চশমা পরে কাজ করলে অ্যান্টিগ্লেয়ার লেন্স ব্যবহার করলে ভাল হয়। চোখে লুব্রিক্যান্ট আই ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
২০– ২০–২০ নিয়ম মেনে চলতেই হবে, এমনই মত চিকিৎসকদের। অন্তত পক্ষে ২০ মিনিট পর পর যদি চোখকে বিশ্রাম দেওয়া যায় তা হলে উপকার হবে চোখেরই। তার জন্য যদি ২০ মিনিট পর এক মিনিট করে চোখ বন্ধ করে থাকা যায়। বা ঘরের বাইরের সবুজ গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় তা হলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে কম্পিউটারের পিছনের দেওয়াল বা পর্দা যদি সবুজ রঙের হয় তা হলে খুবই ভালো হয়। সমস্যা হচ্ছে মনে হলেই ফেলে না রেখে সময় বের করে চলে যাওয়া উচিত চক্ষু চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসকের উপযুক্ত পরামর্শ নেওয়া এবং তা অবশ্যই মেনে চলা উচিত।