ইউরোপীয় পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র (সিইআরএন) বা সার্নে কাজ করার সময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ) জন্ম দিয়েছিলেন স্যার টিম বার্নার্স লি। সময়টা ছিল ১৯৮৯ সাল। আবিষ্কারের পর পরই ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট প্রথম ওয়েবসাইটের যাত্রা হয়। গত সপ্তাহে ৩০ বছরে পা দিল ওয়েবসাইট সেবা। এ তিন দশকে চেহারা, কার্যপরিধি ও নকশার জায়গা থেকে ওয়েবসাইটে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। ওয়েবসাইটের যাত্রার ৩০ বছরের পরিক্রমা আধুনিক বিশ্বের চিত্তাকর্ষক ঘটনাই বটে।
১৯৯৩ সালে ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ সফটওয়্যারকে পাবলিক ডোমেইনে ছেড়ে দেয় সার্ন। উন্মুক্ত লাইসেন্সের মাধ্যমে সবার জন্য এটা সহজলভ্য করা হয়। তার এক বছর বাদে প্রথম ব্লগ চালু হয়। জাস্টিন হল নামে এক ছাত্র তার লেখালেখি প্রকাশের প্লাটফর্ম হিসেবে ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। লিঙ্কস ডট নেট নামে ওই ওয়েবসাইটটিতে মূলত তার সংক্ষিপ্ত পোস্ট এবং বিভিন্ন লিংক যুক্ত পোস্টে বিভিন্ন কন্টেন্টের ব্যাপারে পর্যালোচনা থাকত।
১৯৯৫ সালে জেফ বেজোস নামে ওয়াল স্ট্রিট-ফেরত ব্যাংকার প্রতিষ্ঠা করেন অ্যামাজন। শুরুতে বইয়ের ই-কমার্স প্লাটফর্ম হিসেবে যাত্রা করলেও বর্তমানে এটি বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স ওয়েবসাইট। ২০০১ সালে যাত্রা করে উইকিপিডিয়া। এ ডিজিটাল এনসাইক্লোপিডিয়ার ডোমেইনের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল জিমি ওয়ালেস ও ল্যারি স্যাঙ্গারের নামে।
২০২১ সালের ১৮ জুন নাগাদ বিশ্বে অনলাইন ওয়েবসাইটের সংখ্যা ১৮৬ কোটি। সাইটফি বলছে, বিশ্বজুড়ে গড়ে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২০০টি নতুন ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে।
ওয়েবসাইটের ৩০ বছরের পরিক্রমা নিয়ে ডব্লিউপি ইঞ্জিনের শীর্ষ কর্মকর্তা ফেবিও তোরলিনি বলেন, তিন দশক আগে যাত্রার পর এখন সব ব্যবসার কেন্দ্রে রয়েছে ওয়েবসাইট। এখন সব জীবিকার নিত্যসঙ্গী ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ।
তিনি আরো বলেন, ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম ওয়ার্ডপ্রেসের যে ইকোসিস্টেমে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি ওয়েবসাইট রয়েছে, তার বাজারমূল্য ৫৯ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার। যদি ওয়ার্ডপ্রেস কোনো দেশ হতো, তাহলে বিশ্বের ৩৯তম বৃহৎ অর্থনীতি সুইডেনের সমান হতো তার আকার।
অনলাইনের দুনিয়ায় এত দ্রুত পরিবর্তন আসছে, মানুষের মনে স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগতে পারে—ওয়েবসাইটের ভবিষ্যৎ কী? তোরলিনি বলেন, মহামারীতে মানুষের অনলাইনে কেনাকাটায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ডব্লিউপি ইঞ্জিনের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ বা ৭৫ শতাংশ জেনারেশন জি (মিলিনিয়ালস) এবং দুই-তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ বুমার্স জানায়, আগামী বছরেও তারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অনলাইনে কেনাকাটা চালু রাখবেন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে বাহ্যিক পৃথিবী। সরাসরি স্টোর থেকে গাড়ি ক্রয়ের যে আনন্দ-অনুভূতি, অনলাইনে ক্রয়ের অভিজ্ঞতা তার ধারেকাছেও নেই। একজন ভোক্তা যখন কোনো এসইউভি বা হীরের আংটি কেনে, তার যে অনুভূতি হয় তা দিতে সক্ষম নয় ওয়েবসাইটগুলো। শুধু বিলাসবহুল পণ্যগুলোই যে তাদের অনলাইন কৌশল পাল্টাবে তা নয়, অন্য সব খাতই এটা ভেবে দেখবে।
গত তিন দশকের দ্রুত পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে আগামী দিনগুলোতে ওয়েবের দুনিয়া যে সম্প্রসারিত হবে তা স্পষ্ট। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং (এমএল) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন তোরলিনি।
অতি সাধারণভাবে ৩০ বছর আগে যাত্রা করে বিশ্বব্যাপী মানুষের নিত্য অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে পড়েছে ওয়েবসাইট। আগামী ৩০ বছরে তা কোন উচ্চতায় পৌঁছবে, অনেক প্রযুক্তিবিদের পক্ষেও এর পূর্বাভাস দেয়া কঠিন।