মাগুরার মহম্মদপুরে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ ১২৪৪ জন ভাতাভোগীদের টাকা গেছে অজ্ঞাত মোবাইল নাম্বারের নগদ অ্যাকাউন্টে। শুধু মহম্মদপুরেই নয়, এ চিত্র সারা দেশেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই অন্যের মোবাইলে টাকা চলে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে। শুধু ভাতাভোগী নয়, এ পন্থায় বেহাত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ১২৪৪ জন ভাতাভোগীর ভাতার টাকা ফেরত বা উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, মাগুরার মহম্মদপুরে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য ভাতাভোগীদের টাকা যাচ্ছে অজ্ঞাত অপরিচিত মোবাইল নাম্বারের নগদ অ্যাকাউন্টে। ভাতার উপকারভোগীরা বেশিরভাগই বৃদ্ধ মানুষ। এসব ভাতা আগে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হতো। কিন্তু ব্যাংকিং সিস্টেমে উপকারভোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো। কারণ বেশির ভাগ ভাতাভোগী বৃদ্ধ, তারা চলাফেরা করতে পারেন না।
এ কারণে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের মাধ্যমে সবার নগদ অ্যাকাউন্ট নাম্বারে দিয়ে দেওয়া হবে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যার ফলে তারা ঘরে বসেই টাকা তুলতে পারবেন। কিন্তু একটি প্রতারকচক্র মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করে ভাতাভোগীদের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। নাম্বারগুলো বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। টাকা না পাওয়ার কারণে বৃদ্ধ ভাতাভোগীদের টাকার জন্য সমাজসেবা অফিসের সামনে ভিড় করে কাঁদতে দেখা গেছে। কেঁদে কেঁদে তারা বলছেন- যখন ব্যাংকে টাকা দিত তখন আমাদের টাকা কেউ নিতে পারত না।
সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়, এমআইএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে এমএফএসভুক্ত সব ইউনিট থেকে ভাতাভোগীদের মোবাইল হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরের ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ কিস্তির ভাতার পেরোল প্রেরণ করা হয়েছে এবং ইএফটির মাধ্যমে ভাতাভোগী ভাতার অর্থ প্রাপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু কোনো কোনো ইউনিট থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুলক্রমে প্রকৃত ভাতাভোগীর মোবাইল হিসাব ভিন্ন অন্য মোবাইল হিসাবে অর্থ প্রেরিত হয়েছে।
নির্দেশনা মোতাবেক ভুল নাম্বারে প্রেরিত অধিকাংশ ভাতার অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। মোবাইল বন্ধ থাকা কিংবা অন্য কারণে বাকি ভাতার অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্থানীয় থানায় জিডির নির্দেশনা দিয়েছেন।
অফিস থেকে আরও জানানো হয়, এ উপজেলায় ১১ হাজার ৩৮ জন পান বয়স্ক ভাতা, ৫ হাজার ৬৩৩ জন পান বিধবা ভাতা এবং ৩ হাজার ৩৫৭ জন পান অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। এদের মধ্যে ১৬৩ জন প্রতিবন্ধী, ৬৩৬ জন বয়স্ক এবং ৪৪৫ জন বিধবার ভাতার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী মো. জয়নুর রহমান বলেন, যেসব ভাতাভোগীর ভাতার টাকা উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না তাদের নাম, ঠিকানা, আইডি নম্বর বিকাশ বা নগদ মোবাইল নম্বর, ভাতার পরিমাণ, ভুল মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে ১২৪৪ জনের নামের তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মহম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
মহম্মদপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা শাখা তদন্ত করছে।