ঢাকার দোহারের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ থেকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেয়া বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার টাকাসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিশু-শিক্ষার্থীদের দেয়া উপবৃত্তির টাকা একাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় এমন ঘটনা ঘটায় স্থানীয়দের মাঝে অতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক উপকারভোগীদের ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে গেছে। এসব ঘটনার সাথে কিছু নগদের এজেন্ট ব্যাংকিং এর মালিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়,উপজেলার কাটাখালী এলাকায় আয়েশা ষ্টোরের মালিক আছলাম হোসেন প্রায় ৮ থেকে ১০ জনের উপবৃত্তির টাকা তার ‘নগদ’ একাউন্টের এজেন্ট নাম্বারে নিয়ে নেন।
একই এলাকার বাসিন্দা আকলিমা আক্তারের নগদ একাউন্ট থেকে ৩৯০০ ও হাসান নামের এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে ১৪০০ টাকা নগদ একাউন্টে স্থানান্তর করে নেন আছলাম।
তারা জানান একাউন্টে টাকা এসেছে কিনা জানতে কাটাখালী আয়েশা ষ্টোরে গেলে কৌশলে টাকা স্থানান্তর করেন আছলাম। কাটাখালী হ্যাপি আক্তার নামে আরও এক শিক্ষার্থীর মোবাইল থেকে ৪৫০০ টাকা ০১৯০৬৪৯৪৮১১ এই নাম্বারে স্থানান্তর করে প্রতারক চক্রটি। তবে উল্লেখিত নাম্বারে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় উপজেলার জয়পাড়া মোল্লা ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে নগদের রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে। একাধিকবার ঐ মোবাইলে ফোন দিলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী হ্যাপি জানান, ২৮ জুন রাত সারে আটটার দিকে আমি জয়পাড়া একটি মোবাইলে দোকানে নগদের ব্যালেন্স চেক করি এরপর রাত ৮ টা ৪৬ মিনিটে আমার একাউন্ট থেকে একটি নাম্বারে টাকা স্থানান্তর দেখতে পাই।
দোহার পুরী এলাকায় ১৯নং দোহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা অন্য নাম্বারে স্থানান্তর করা হয়। উপজেলার কুসুমহাটি ইউনিয়নে শিলাকোঠা এলাকায় বেশ কয়েকজনের টাকা নগদ একাউন্ট থেকে স্থানান্তরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা এবিষয়ে কুসুমহাটি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাওন ইসলাম বাদশা মন্ডলের কাছে গেলে তাদের নগদ একাউন্ট খালি দেখতে পান তিনি।
এবিষয়ে ইউপি সদস্য বাদশা মন্ডল বলেন, আমার ওয়ার্ডে বয়স্ক ভাতার উপকারভোগীদের মধ্যে কয়েকজনের টাকা স্থানান্তরের খবর পেয়েছি। কিন্তু কারা কবে স্থানান্তর করেছে এবিষয়ে কোন তথ্য পাইনি। কুসুমহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন আজাদ জানান, এমন কোন অভিযোগ আমি এখনো পাইনি। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রশাসনের উচিৎ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুরুজ বেপারী জানান, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টাকা নিয়ে যদি কোন প্রতারক গরীবের টাকা স্থানান্তর করে নেয় তাদের খুঁেজ বের করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া উচিৎ। টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে ‘নগদ’এর এরিয়া ম্যানেজার মো.মাহফুজ হোসেন বলেন, কোন এজেন্ট এবং প্রতারক সরকারি কোন ভাতা বা অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করলে তাদের এজেন্ট বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে দোহার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.নাঈম বলেন, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার টাকা নিয়ে যদি কেউ সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করেন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।