মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ এর মাধ্যমে দেওয়া ভাতা ও উপবিত্তির টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে । সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা এবং উপবিত্তির টাকা ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে লক্ষাধিক গ্রাহক। নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের গড়িমসির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শত শত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হা-হুতাশ বাড়ছে।
ভাতাভোগীদের অভিযোগ ভাতার টাকা তুলতে আগে উপকারভোগীদের ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা তুলতে হতো। এখন এসব সমস্যার সমাধান হলেও ভাতা ও উপবিত্তির টাকা উধাও হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। ভাতার টাকা দিয়ে আমাদের দুবেলা খাবার জোটে । সরকারের দেওয়া এই টাকা গুলো যদি আমরা না পায় আমাদের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে ।
ঝিনাইদহে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। একাউন্ট হ্যাক করে কে বা কারা হতদরিদ্রদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকার শোকে হতদরিদ্ররা আহাজারি করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হ্যাক করার পর এবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোটি কোটি টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেয়া হলো। কিন্তু এ ব্যাপারে নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের গড়িমসির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শত শত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হা-হুতাশ বাড়ছে।
চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহে প্রাথমিকের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়। সেই টাকা আজও উদ্ধার হয়নি। শনাক্ত করা যায়নি প্রতারক চক্রকে। প্রতারকদের প্রাথমিকের মিশন সফল হওয়ার পর তাদের নজর পড়ে সমাজসেবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রদেয় শিক্ষা উপবৃত্তি, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ভাতার ওপর।
শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের হাসি রানী অভিযোগ করেন, তিনি নতুন ভাতাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু প্রথম কিস্তির টাকা তিনি পাননি। নগদ একাউন্ট চেক করে দেখেন তার টাকা কে বা কারা হ্যাক করে তুলে নিয়েছে।
মাগুরার মহম্মদপুরে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ ১২৪৪ জন ভাতাভোগীদের টাকা গেছে অজ্ঞাত মোবাইল নাম্বারের নগদ অ্যাকাউন্টে। শুধু মহম্মদপুরেই নয়, এ চিত্র সারা দেশেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই অন্যের মোবাইলে টাকা চলে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে। শুধু ভাতাভোগী নয়, এ পন্থায় বেহাত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও।
ঢাকার দোহারের বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ থেকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেয়া বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার টাকাসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিশু-শিক্ষার্থীদের দেয়া উপবৃত্তির টাকা একাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কাটাখালী এলাকায় আয়েশা ষ্টোরের মালিক আছলাম হোসেন প্রায় ৮ থেকে ১০ জনের উপবৃত্তির টাকা তার ‘নগদ’ একাউন্টের এজেন্ট নাম্বারে নিয়ে নেন।
আরো পড়ুন: ভাতার টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বেড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অর্ধশতাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে টাকা তুলে নিয়েছে এ প্রতারকচক্র।
এই বিষয়ে কথা বলতে নগদের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক লিংকন মো. লুৎফরজামান সরকার নম্বরে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি ।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তিসহ সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) ‘নগদ’ সরাসরি উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। ‘নগদ’-এর তথ্য থেকে জানা যায়, ‘চলতি বছরে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এমএফএস অপারেটরদের মাধ্যমে পাঁচ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে, যেখানে মোট ৭৫ শতাংশ ভাতা স্বচ্ছতার সঙ্গে বিতরণ করেছে নগদ।’