মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদ এর মাধ্যমে দেওয়া ভাতা ও উপবিত্তির টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে । দেশের প্রতিটি অঞ্চলে নগদ একাউন্ট থেকে ভাতা ও উপবৃত্তির টাকা উধাওয়ের চিত্র উঠে এসেছে টেকজুমের অনুসন্ধানে। দেশের প্রতি জেলায় ভাতা ও উপবিত্তির টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে সাধারন গ্রাহকদের। মামলা করেও সমাধান পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা । কোন কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছেনা হতদরিদ্র এই জনগষ্ঠির। ‘নগদ’ এর গড়িমসির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শত শত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হা-হুতাশ বাড়ছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উধাও হওয়া কারন জানতে ‘নগদ’ এর জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক লিংকন মো. লুৎফরজামান সরকার নম্বরে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ব্যবস্থা দেখিয়ে পরে আর কল রিসিভ করেনি ।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা এবং উপবিত্তির টাকা ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে লক্ষাধিক গ্রাহক।
আরো পড়ুন: ‘নগদ’ থেকে ভাতা ও উপবৃত্তির টাকা উধাও, বিপাকে লক্ষাধিক গ্রাহক
ঝিনাইদহে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। একাউন্ট হ্যাক করে কে বা কারা হতদরিদ্রদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকার শোকে হতদরিদ্ররা আহাজারি করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হ্যাক করার পর এবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোটি কোটি টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেয়া হলো। কিন্তু এ ব্যাপারে নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের গড়িমসির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শত শত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হা-হুতাশ বাড়ছে।
মাগুরার মহম্মদপুরে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধীসহ ১২৪৪ জন ভাতাভোগীদের টাকা গেছে অজ্ঞাত মোবাইল নাম্বারের নগদ অ্যাকাউন্টে। শুধু মহম্মদপুরেই নয়, এ চিত্র সারা দেশেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই অন্যের মোবাইলে টাকা চলে যাওয়ার অভিযোগ এসেছে। শুধু ভাতাভোগী নয়, এ পন্থায় বেহাত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও। উপজেলার ১১ হাজার ৩৮ জন পান বয়স্ক ভাতা, ৫ হাজার ৬৩৩ জন পান বিধবা ভাতা এবং ৩ হাজার ৩৫৭ জন পান অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। এদের মধ্যে ১৬৩ জন প্রতিবন্ধী, ৬৩৬ জন বয়স্ক এবং ৪৪৫ জন বিধবার ভাতার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
আব্দুল খালেক নামে এক প্রতিবন্ধীর বাবা জানান, ব্যাংক থেকে যখন টাকা প্রদান করা হতো, তখন তাদের কোনো টাকা খোয়া যায়নি। মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর তাদের এলাকার বহু মানুষের ভাতা নগদ একাউন্ট থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন: ভাতার টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে
বিষয়টি নিয়ে কলেজছাত্র রাজন জানান, তিনি কারো টাকা উত্তোলন করেননি। সামনে নির্বাচন, তাই প্রতিপক্ষরা আমার তার ওপর এরকম মিথ্যা দায় চাপাচ্ছে।
স্থানীয় সাগান্না ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুল ওহাব বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে দলাদলির কারণে এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ থানায় দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো তার ওয়ার্ডেও নগদ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার কালিকাপুর গ্রামের ফারজানা আফরিন এ্যানী জানান, অহসায় প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে আসছেন। তিনি নগদ একাউন্ট খোলার পর তার নগদ ০১৯৬৯১৯০১৪৩ নাম্বারের সাড়ে চার হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা আসে। কিন্তু উক্ত টাকা গত ৯ জুলাই কে বা কারা ০১৯০৬৪৯৩৩৯১ নাম্বারে ট্রান্সফার করে নেয়। এ ঘটনায় তিনি ১৯ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি জিডি (যার নং ৯৯২) করেছেন। কিন্তু এখনো টাকা ফিরে পাননি।