মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’। এমএফএস সেবা দেশে মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিত। সরকারি ও বেসরকারি যৌথ মালিকানায় নগদ পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি নগদের মাধ্যমে দেওয়া সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা ‘নগদ’ এর পেমেন্ট সিস্টেমের দুর্বলতায় একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে।
সম্প্রতি নগদের পেমেন্ট সিস্টেমের দুর্বলতায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা লুট হওয়ার ঘটনায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। নগদে অর্থ লোপাটের ঘটনাটি সংঘটিত হয় পাঁচ সপ্তাহ আগে, কিন্তু এতদিন বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখার পর অবশেষে থানায় মামলা দায়ের করেছে নগদ কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট সিরাজগঞ্জশপ ডটকম নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নগদ থেকে ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জশপের গ্রাহকদের হিসাব ব্যবহার করে এ অর্থ লুটে নেয় একটি চক্র।
ঈশ্বরদী থানায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। একাউন্ট হ্যাক করে কে বা কারা হতদরিদ্রদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে টাকার শোকে হতদরিদ্ররা আহাজারি করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হ্যাক করার পর এবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোটি কোটি টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেয়া হলো।
পাবনা জেলায় ঈশ্বরদী থানায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে। ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের আলহাজ মোড়ে থেকেন রজিনা । সরকারের দেওয়া ভাতার টাকাতে চলে তার দিন। বয়স্ক ভাতার টাকা মোবাইলে আসবে মোবাইল ভাতা নিয়ে দোকানে গেলে দেখেন তার মোবাইলে কোন টাকা নেই টাকা গতকালই কেও তুলে নিয়েছে ।
ঈশ্বরদী শহরের বাসিন্দা সাথী আক্তার জানান, আমার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা নগদ একাউন্টে আসে কিন্তু টাকা তুলতে গেলে দেখেন ‘নগদ’ একাউন্টে টাকা নেই । কে বা করা এই টাকা নিয়ে গেলো বুঝতে পারি নি । তিনি আরো বলেন, শধু তিনি না এই ঘটনা তার পরিচিত আরো অনেকের সাথে হয়েছে ।
নগদ গড়িমসির কারণে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শত শত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে হা-হুতাশ বাড়ছে।
সার্ভিস চার্জ তুলনামূলক কম হওয়ায় নগদের প্রতি গ্রাহকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আর এ সুযোগে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাদের গ্রাহক। এ ব্যাপারে সোবহানবাগ এর রাব্বি বলেন, নগদে টাকা পাঠানো সাশ্রয়ী, এ কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের পছন্দ নগদ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক জালিয়াতির ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। এ ঘটনায় বেশ বড় ধরনের ইমেজ সংকটে পড়েছে নগদ। এই বিষয়ে জানতে নগদের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক লিংকন মো. লুৎফরজামান সরকার নম্বরে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ব্যবস্থা দেখিয়ে পরে আর কল রিসিভ করেনি ।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, একটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের সাইবার নিরাপত্তা যদি হুমকির মুখে থাকে তাহলে তার পরিণতি কতোটা ক্ষতিকর হতে পারে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা থেকেই আঁচ করা যায়। ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলার শিকার বলেই বলা হচ্ছে, ব্যাংক খাতগুলোকে আইটি খাতে বেশি বেশি হারে বিনিয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে, সাইবার নিরাপত্তার পেছন বিনিয়োগ জোরদার করতে হবে। নগদ এর গড়িমসির কারণে আরো বড় ক্ষতি হতে পারে যদি তারা সাইবার নিরাপত্তায় গুরুত্ব না দেয় ।
‘নগদ’ নামে ডাক অধিদফতর ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু করলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। থার্ড ওয়েব টেকনোলজিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছে ‘নগদ’ এর কার্যক্রম। অন্যদিকে, ডাক অধিদফতরের সেবা হলেও দেশের সব পোস্ট অফিসে নেই নগদ-এর সেবা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আদলে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও অনুমোদন না নেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক । গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় প্রচলিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবার মতো ডাক অধিদফতরের নগদ পরিচালনা নিয়ে আলোচনা হয়। সে সভার অভিমত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।