যশোরের শার্শায় বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের হাতে আসার আগেই ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের টাকা এভাবে তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, যে সকল স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে সে সব স্কুলের শিক্ষকদের আমরা তালিকা দিতে বলেছি। বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে সতর্ক করে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, আগে ‘বিকাশ’ বা ‘শিওরক্যাশে’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা দেয়া হতো। ‘নগদ’ এ উপবৃত্তির টাকা দেয়ার জন্য ২০২০ সালে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন, নাম, শ্রেণী, রোল নম্বর, মায়ের ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল সিম নম্বর ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে এই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের মা’দের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত ওইসব মোবাইলে দেয়া হয়েছে। ওই টাকা তুলতে এজেন্ট ও কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে অভিভাবকরা দেখেন তাদের একাউন্টে টাকা নেই। কে বা কারা তাদের টাকা উঠিয়ে নিয়েছে।
উপজেলার বড়বাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণীর ছাত্রী লামাইয়া, দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ইমাম, তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নুরি, ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী লামাইয়া, রাজনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আছিয়া খাতুন ও রাকিবুল ইসলাম এবং সমন্ধকাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শাহারিয়া, বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জুহাইন হোসেনসহ প্রায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী প্রণোদনার অর্থ পায়নি।
দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জুহাইন হোসেন অনন এর নানা সাংবাদিক জামাল হোসেন জানান, আগে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছিল। পরে স্কুল থেকে নগদ একাউন্ট খোলার পর এ পর্যন্ত কোন ম্যাসেজ পাননি। স্কুলে যোগাযোগ করা হলে তারা নগদ কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করতে বলেন। কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে দেখা যায় দুটি তারিখে কে বা কারা ১৮ শ‘ টাকা তুলে নিয়ে গেছে। যে নম্বর দিয়ে টাকা তুলেছে সেই নম্বরে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক স্বরুপদাহ গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, মশিয়ার রহমান, শার্শার ডাক্তার আক্তারুজ্জামান, মনির হোসেন, মশামিম ইসলাম, হোমিও চিকিৎসক আবু মুছা জানান, সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির প্রণোদনার অর্থ সহজে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের হাতে পৌছানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিষয়টি খুবই যৌক্তিক। কিন্তু কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তবে ভাবমর্তি অক্ষুন্ন রাখতে হলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীরা তার অভিভাবকের নামে ব্যাংকে ১০ টাকার একাউন্ট খুলে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা দিলে এক
টাকাও ক্ষতি হবে না বরং প্রত্যেক অভিভাবক খুশি হবেন। ‘শিওরক্যাশ’ পরবর্তীতে ‘নগদে’ যে অনিয়ম দূর্নীতি ও আত্মসাত হয়েছে সেখানে থেকে বেরিয়ে এসে ১০ টাকার একাউন্ট খুলে অভিভাবকরা উপবৃত্তির টাকা ও প্রণোদনার টাকা পেতে সাচ্ছন্দবোধ করবে।
এ বিষয়ে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলী বলেন, আমার স্কুলের ১০-১৫ জন অভিভাবক এভাবে এসে অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়কে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অনেক অভিভাবকই এসে বলেছেন টাকা এসেছে কিন্তু আমরা তুলতে পারছি না। উপজেলার আরো কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও এভাবে প্রতারকরা তুলে নিয়েছে বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, শিওরক্যাশে টাকা দেয়ার সময়ও প্রথম দিকে এভাবে প্রতারকরা উপবৃত্তির টাকা তুলে নিয়েছিলো।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার প্রতিটি স্কুলে ২/৫ জন বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের ‘নগদে’র মাধ্যমে প্রণোদনার টাকা আসেনি। এ পর্যন্ত ৬০ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। শিওরক্যাশে দেয়ার সময়ও প্রথমদিকে এমন হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ওটিপি নম্বর নিয়ে টাকা তুলে নেয়া মোবাইল নম্বরগুলো এরপর থেকেই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি। প্রণোদনার অর্থ না পাওয়ার তালিকা দেওয়ার জন্য। সরকারী অর্থ যেভাবেই দেয়া হোক না কেন অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীরা যাতে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।