গত সোমবার বড় আকারের বিভ্রাটের কবলে পড়েছিল ফেসবুক ও তাদের মালিকানাধীন মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যবহারকারীরা অনেক চেষ্টা করেও প্রবেশ করতে পারেননি সেবাগুলোতে। এ সময়ে ব্যবহারকারীরা টুইটার, টিকটক, টেলিগ্রাম ও সিগন্যালের মতো বিকল্প প্লাটফর্মে গিয়েছে। গত সোমবারের এ বিভ্রাট নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কন্সপিরেসি থিউরিস্ট বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। আবার বিভিন্ন দেশের তদারককারীরা নড়েচড়ে বসেছেন। মাত্র এক বা অল্প কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্মের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ার নেতিবাচক দিক নিয়ে সচেতন ও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন তারা। খবর এপি ও গিজমোদো।
ফেসবুকনির্ভর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি। এর মাশুল গুনতে হয়েছে ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গকেও। ফেসবুকের শেয়ারদরে পতনের জেরে জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদ কমেছে ৬০০ কোটি ডলার। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা থেকেও কয়েক ঘর নিচে নেমে এসেছেন তিনি। এক সময়ে তিনের ঘরে থাকা জাকারবার্গের অবস্থান এখন ছয়ে।
কিন্তু ঠিক কী কারণে বিভ্রাটের কবলে পড়েছিল ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম? কেনইবা এতটা সময় লেগেছে সেবা ফিরিয়ে আনতে? ফেসবুক এক বিবৃতিতে বলেছে, নিজেদের ডাটা সেন্টারের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক সমন্বয়কারী ‘ব্যাকবোন রাউটারে’র কনফিগারেশন পরিবর্তনের কারণেই বিভ্রাটের কবলে পড়তে হয়েছিল তাদের। থমকে গিয়েছিল সব সেবা। শুধু ফেসবুকই নয়, তাদের সবকিছুই গায়েব হয়ে গিয়েছিল অনলাইন থেকে। অন্যদিকে, এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে ক্লাউডফ্লেয়ার। তারা বলছে, গোটা ঘটনার সঙ্গে দুটি বিষয় জড়িত। এর একটি ডোমেইন নেম সিস্টেম (ডিএনএস), আর অন্যটি ‘বর্ডার গেটওয়ে প্রটোকল (বিজিপি)। ইন্টারনেটের পুরোটাতে রয়েছে অসংখ্য সংযুক্ত নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে বিজিপি। সাধারণত বিজিপিই বলে দেয় নেটওয়ার্ককে কোথায় যেতে হবে। অন্যদিকে, ডিএনএস হলো প্রত্যেক ওয়েবসাইটের অবস্থান সম্পর্কিত ‘অ্যাড্রেস সিস্টেম’ আইপি অ্যাড্রেস। এক কথায় বলা যায়, বিজিপি হলো ‘রোডম্যাপ’, যা ‘আইপি অ্যাড্রেস’ পর্যন্ত যাওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী রাস্তাটি খুঁজে বের করে।
সোমবার একাধিক আপডেটের মাধ্যমে ফেসবুক বিজিপিকে জানায়, তাদের সেবা পর্যন্ত যাওয়ার যে পথগুলো ছিল, তা আর নেই। ফলে যারা ফেসবুকে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, তারা আদতে পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এতে শুধু ফেসবুক নয়, প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন সব সেবা আক্রান্ত হয়েছিল। এমনকি ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমও বিভ্রাটের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অফিস থেকে ছিটকে পড়েছিলেন ফেসবুক কর্মীরা, ব্যবহার করতে পারেননি নিজেদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্লাটফর্মও।
ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমও বিভ্রাটের কবলে পড়ায় কর্মীদের জন্য সমস্যা শনাক্ত ও সমাধান করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সিকিউরিটি পাস সিস্টেম বিভ্রাটের কবলে পড়ায় যোগাযোগ প্লাটফর্ম, ওয়ার্কপ্লেস এবং অফিসে প্রবেশ করতে পারছিলেন না খোদ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরাই।
মূল সমস্যা কী হয়েছিল এবং কীভাবে তা ঠিক করা হয়েছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তেমন কিছু জানায়নি ফেসবুক। তবে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজ সার্ভারে কারিগরি টিম পাঠিয়েছিল সামাজিক মাধ্যম জায়ান্টটি এবং যেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেখানে ম্যানুয়ালি সার্ভার রিসেট করে সমস্যার সমাধান করেছে।