আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে আসা অস্বাভাবিক বেতার তরঙ্গ শনাক্ত করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেছে বলে তাঁদের জানা নেই। এর অর্থ হতে পারে আগে অজানা ছিল এমন কোনো মহাজাগতিক বস্তুর অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
মহাজাগতিক বস্তুটির উজ্জ্বলতা ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে, আর আসা সংকেতও হুটহাট চালু কিংবা বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জিতেং ওয়াং। তাঁর নেতৃত্বে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির স্কুল অব ফিজিকসে পিএইচডি করছেন ওয়াং। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নতুন এই সংকেতের সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো এর সমবর্তন (পোলারাইজেশন) অত্যন্ত বেশি। অর্থাৎ এর আলো কেবল একদিকে স্পন্দিত হয়। তবে সেই দিকটি সময়ের সঙ্গে বদলায়।
গবেষক দলটি প্রথমে ভেবেছিল, এটা হয়তো পালসার (অত্যন্ত নিবিড় এবং দ্রুত ঘূর্ণমান নিউট্রন নক্ষত্র) কিংবা এমন নক্ষত্র, যা বিশাল অগ্নিঝড় নির্গত করে। তবে সে ধরনের নক্ষত্রের সঙ্গে আসা নতুন এই বেতার তরঙ্গ ঠিক মেলে না।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতের আকাশে অবস্থান অনুযায়ী নতুন মহাজাগতিক বস্তুটির নাম রাখা হয়েছে ‘এএসকেএপি জে১৭৩৬০৮.২-৩২১৬৩৫’।
সিডনি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি এবং ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অধ্যাপক টারা মারফি বলেন, ‘বস্তুটি অনন্য, কারণ শুরুতে সেটি অদৃশ্য ছিল, ক্রমে উজ্জ্বল হয়েছে, হারিয়ে গেছে এবং আবার ফিরে এসেছে। এমন আচরণ অভূতপূর্ব।’
অস্ট্রেলিয়ান স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে পাথফাইন্ডার (এএসকেএপি) রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণের সময় প্রথম বস্তুটি ধরা পড়ে। এই টেলিস্কোপের ৩৬টি ডিশ একসঙ্গে একক টেলিস্কোপ হিসেবে কাজ করে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মারচিসন রেডিও-অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরিতে। পরে নিউ সাউথ ওয়েলসের পার্কস রেডিও টেলিস্কোপ এবং সাউথ আফ্রিকান রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরির মিরক্যাট টেলিস্কোপ দিয়ে পুনরায় পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বিবৃতিতে মারফি বলেছেন, ‘আমরা তখন দক্ষিণ আফ্রিকার আরও সংবেদনশীল মিরক্যাট রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে চেষ্টা চালাই। কারণ, বিরতি দিয়ে সংকেত আসছিল। আবার দেখতে পাওয়ার আশায় কয়েক সপ্তাহ পরপর আমরা ১৫ মিনিটের জন্য পর্যবেক্ষণ করতাম।’
পরে আবারও সংকেত ধরা পড়লে সেটির উৎস ভিন্ন ধরনের মনে হয় তাঁদের। আগের পর্যবেক্ষণে কয়েক সপ্তাহ ধরে সংকেত পেলেও পরেরবার কেবল এক দিন পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। মারফি বলেছেন, আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপ হয়তো রহস্যের সমাধানে সাহায্য করবে।