এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আগামী পাঁচ বছরে পাঁচ লক্ষ তরুণের ডিজিটাল ট্যালেন্ট বিকাশে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা (৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করবে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি, অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইনোভেশন ডে – ডিজিটাল ট্যালেন্ট সামিট ২০২১ -এ মূল বক্তব্য রাখার সময় হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট জেফরি লিউ এ ঘোষণা দেন। এ অঞ্চলে তরুণদের ডিজিটালভাবে দক্ষ করে তুলতে আসিয়ান ফাউন্ডেশনের সাথে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে টেকসই ডিজিটাল ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম কীভাবে ত্বরাণ্বিত করা যায় সে বিষয়ে অনলাইন সামিটে নীতি-নির্ধারক, গবেষক ও খাত বিশেষজ্ঞগণ আলোচনা করেন। সরকারি নেতৃবৃন্দদের মূল প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ইনোভেশন ডে – ডিজিটাল ট্যালেন্ট সামিট ২০২১ শুরু হয়। এ সামিটে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল অব আসিয়ান ফর আসিয়ান পলিটিক্যাল-সিকিউরিটি কমিউনিটি রবার্ট ম্যাথিউস টেনে, আসিয়ান ডিজিটাল সিনিয়র অফিসিয়াল মিটিং -এর প্রধান মোহাম্মদ মেনটেক, ক্যাম্বোডিয়ার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী চে ভেনডেথ, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্টাফের প্রধান জেনারেল টিএনআই (পার্ণ) ড. মোয়েলদোকো, শ্রীলঙ্কার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকশে, চীনে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত হোসে স্যান্টিয়াগো এল. এসইএ. রোমানা, থাইল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সেক্রেটারি অধ্যাপক সিরিরার্গ সংসিবিলাই, এম.ডি. পিএইচডি। তাঁদের বক্তব্যে এ অঞ্চলে ডিজিটাল ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে মূল অংশীজনদের অংশগ্রহণের গুরুত্বের বিষয়টি উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল অব আসিয়ান ফর আসিয়ান পলিটিক্যাল-সিকিউরিটি কমিউনিটি, রবার্ট ম্যাথিউস বলেন, “বৈশ্বিক করোনা মহামারি আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল করেছে। এই বিষয়টির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল ট্যালেন্ট সামিট ২০২১ আয়োজন করা হয়েছে মূল আলোচ্যবস্তু আসিয়ান আইসিটি ইয়ুথ ট্যালেন্টের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।”
উদ্বোধনী বক্তব্যে হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বোর্ড মেম্বার ক্যাথেরিন চেন বলেন, “উদ্ভাবন ও উন্নতি ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভাবন সহায়ক একটি ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হুয়াওয়ে এর অংশীদারদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।” তিনি আরও জানান, “এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে হুয়াওয়ের যাত্রায় সমমনা আরও বন্ধু বা অংশীদারদের খুঁজে পেয়েছে। এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল ট্যালেন্টদের গড়ে তুলতে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উদ্ভাবনী ও গতিশীল ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য আমাদের একসাথে কাজ শুরু করা প্রয়োজন।”
ইউনেস্কো, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও লী কুয়ান ইও স্কুল অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ম্যাক্সিস এর গুরুত্বপূর্ণ বক্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় টেকসই উন্নয়নে ডিজিটাল ট্যালেন্টের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সামিটে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল হুয়াওয়ে’র ২০২২ এশিয়া প্যাসিফিক ডিজিটাল ট্যালেন্ট ইনসাইট’র উপস্থাপনা। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ডিজিটাল ট্যালেন্ট বিষয়ক কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টা ও যাত্রা সম্পর্কিত বিষয় উল্লেখ করে শ্বেতপত্র পাঠ করেন ন্যাশনাল ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যালেক্স লী।
অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট জেফেরি লিউ ঘোষণা দেন যে, “ডিজিটাল রূপন্তরে উদ্ভাবনী আইসিটি ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সবার জন্য সুবিধাজনক ফলাফলের ভিত্তিতে সম্মিলিত উদ্ভাবনের মাধ্যমে আইসিটি দক্ষতার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। হুয়াওয়ে আগামী ৫ বছরে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে পাঁচ লাখ ডিজিটাল ট্যালেন্ট বিকাশে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।”
এশিয়া প্যাসিফিকের বিশেষভাবে আসিয়ান অঞ্চলে ডিজিটাল ট্যালেন্টের অভাব পূরণের প্রতিশ্রুতি আসিয়ান ফাউন্ডেশন’র সাথে হুয়াওয়ে’র সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে আরও জোরদার হয়েছে। চুক্তিতে উভয় পক্ষের আসিয়ান সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এটি ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী তরুণদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হুয়াওয়ের বৈশ্বিক সিএসআর ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ সিডস ফর দ্য ফিউচারের স্কেলড-আপ সংস্করণ।
আসিয়ান সিডস ফর দ্য ফিউচার প্রকল্পটি আসিয়ান ডিজিটাল মাস্টারপ্ল্যান ২০২৫ -এর লক্ষ্যপূরণেও সহায়তা করবে। আসিয়ান ডিজিটাল মাস্টারপ্ল্যান ২০২৫ এই অঞ্চলের তরুণদের ডিজিটাল ইকোনোমিতে অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ তৈরিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। আগামী বছরের শুরুতে আসিয়ান সিডস ফর দ্য ফিউচার শুরু হবে। এতে নেতৃত্ব ও ডিজিটাল দক্ষতায় সক্ষমতা তৈরির ভার্চুয়াল যাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য ১৫-৩০ বছর বয়সী তরুণদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।