জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে সম্প্রতি নতুন আইন স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফলে হুয়াওয়ে, জিটিইর মতো প্রতিষ্ঠান নতুন যন্ত্রপাতির লাইসেন্স গ্রহণে নিয়ন্ত্রকদের অনুমতি গ্রহণ করতে পারবে না। খবর রয়টার্স।
চীনের টেলিকম ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপের সর্বশেষ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দ্য সিকিউর ইকুইপমেন্ট অ্যাক্ট গ্রহণ করেছে। অক্টোবরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ৪২০ ভোটে অ্যাক্টটি পাস হয়। এরপর ২৮ অক্টোবর মার্কিন সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ এমন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারে সব ধরনের আবেদনে নিষেধাজ্ঞা প্রদানে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনকে (এফসিসি) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এফসিসির কমিশনার ব্রেন্ডন কার বলেন, ২০১৮ সাল থেকে কমিশন হুয়াওয়ের তিন হাজারের বেশি আবেদন গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, নতুন আইন কার্যকর হলে হুয়াওয়ে, জিটিইর মতো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিকর প্রযুক্তি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারবে না।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থার সুরক্ষায় নতুন আইন প্রণয়ন করেছিল দেশটির সরকার। গত মার্চে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ পাঁচটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো হুয়াওয়ে, জিটিই, হাইটেরা কমিউনিকেশনস, হ্যাংঝউ হিকভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি ও ঝেইজাং ডাহুয়া টেকনোলজি।
জুনে ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমতিপ্রাপ্তি বন্ধে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়েছিল। তবে এফসিসির এ ভোটের বিরোধিতা করে বেইজিং। এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা বন্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।
আইনে প্রস্তাবিত বিধি অনুসারে, চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারে যে অনুমতি দেয়া হয়েছিল, চাইলে এফসিসি সেগুলোও বাতিল করে দিতে পারবে। জুনে হুয়াওয়ে এফসিসির প্রস্তাবিত সংশোধনকে বিপথগামী ও অপ্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক বলে অভিহিত করেছে।
অন্যদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টেলের কাছ থেকে প্রসেসর সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ায় সার্ভার ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার কথা চালাচালি করছে হুয়াওয়ে।
বিষয় সম্পর্কে অবগত কয়েকটি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সরকার-সমর্থিত এক ক্রেতাসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে নিজেদের এক্স৮৬ সার্ভার ব্যবসা বিক্রির আলোচনা চালাচ্ছে হুয়াওয়ে। তবে এ লেনদেনে অর্থের পরিমাণের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তা কয়েকশ কোটি ইউয়ান হতে পারে। বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অধিগ্রহণ আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। এ পর্যন্ত আলোচনায় এগিয়ে থাকা কোম্পানিটি হচ্ছে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হেনান ইনফরমেশন ইন্ডাস্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট। শুরু থেকেই হুয়াওয়ের সার্ভার ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল এ প্রতিষ্ঠান। তবে বর্তমানে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এ প্রতিষ্ঠান নাকি ভোক্তা ইলেকট্রনিকস নির্মাতা হুয়াকিন টেকনোলজি বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে অধিগ্রহণের চেষ্টা করছে সেটি স্পষ্ট নয়। গত বছর হুয়াওয়ে তাদের সাবসিডিয়ারি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অনর বিক্রি করে দেয়। তখন তা কিনে নিয়েছিল শেনঝেন সরকারের নেতৃত্বে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিজেদের অবস্থান ও ব্যবসা হারালেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীনের এ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এর অংশ হিসেবে ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাজারে মেট ৫০ সিরিজের স্মার্টফোন আনতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।