অ্যান্টিভাইরাস শুধু পার্সোনাল কম্পিউটারের (পিসি) নিরাপত্তার জন্যই নয়। অনেকেই এখন মোবাইল ডিভাইসের নিরাপত্তায় অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করছেন। তবে অ্যান্ড্রয়েডচালিত মোবাইল ফোনে ব্যবহূত বেশির ভাগ অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার অ্যাপই অকার্যকর ও অনির্ভরযোগ্য। এভি-কম্পারেটিভস নামে অস্ট্রিয়ান একটি অলাভজনক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন কোম্পানির প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর নিউজ নাউ।
এভি-কম্পারেটিভসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা বহুলব্যবহূত ২৫০টি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ নিয়ে জরিপ চালিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮০টি অ্যাপ ৩০ শতাংশ ক্ষতিকর অ্যাপ শনাক্ত করতে পেরেছে। ২ হাজার ক্ষতিকর অ্যাপ যাচাই করার পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার অ্যাপ ভুয়া সতর্কতা দেখায়।
এভি-কম্পারেটিভসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের একমাত্র সাইবার নিরাপত্তা পণ্য ‘রিভ অ্যান্টিভাইরাস ‘ ক্ষতিকর অ্যাপ শনাক্ত করতে পেরেছে।
গুগল প্লে স্টোরে থাকা মোট ১৩৮টি ভেন্ডরের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ এভি-কম্পারেটিভসের পরীক্ষার তালিকায় রাখা হয়েছিল। এ তালিকায় অ্যাভাস্ট, এভিজি, বিটডিফেন্ডার, ম্যালওয়্যার বাইটস, ম্যাকাফি, সিম্যানটেক ও ভিএসএআরের মতো জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এভি-কম্পারেটিভসের গবেষকরা এমুলেটর ব্যবহারের পরিবর্তে ২৫০টি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপের প্রত্যেকটি পৃথকভাবে ম্যানুয়ালি পরীক্ষা করেন। এ কাজের জন্য তারা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে একটি করে নির্ধারিত অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করেন। এরপর ব্রাউজারের মাধ্যমে ওই ডিভাইসে ক্ষতিকর বা ভাইরাসযুক্ত অ্যাপ ইনস্টল করা হয়। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপই ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার শনাক্তে ব্যর্থ হয়।
এভি-কম্পারেটিভসের তথ্যমতে, তাদের পরীক্ষায় বিদ্যমান বেশকিছু অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপকে ম্যালিশাস অ্যাপ ব্লক করতে দেখা গেছে। কিন্তু বেশির ভাগই অনেক পুরনো অ্যান্ড্রয়েড ম্যালওয়্যার শনাক্তে ব্যর্থ হয়। এ ধরনের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করা থাকলেও খুব সহজে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ক্ষতিকর ভাইরাস বা কনটেন্ট প্রবেশ করানো সম্ভব।
এভি-কম্পারেটিভসের বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০১৮ সালের ২ হাজার পরিচিত অ্যান্ড্রয়েড ম্যালওয়্যার হুমকি তারা পরীক্ষা করেছেন। বহুল ব্যবহূত অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলোর তা সহজে শনাক্ত করতে পারার কথা। কিন্তু বাস্তবে এমন হয়নি। ২৫০টি অ্যাপের মধ্যে ১৭০টি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ কোনো ধরনের ম্যালওয়্যার ধরতে পারেনি। ২৩টি অ্যাপ ম্যালওয়্যার শনাক্তে শতভাগ কার্যকর বলে দাবি করা হয়। ১৬টি অ্যাপ রয়েছে, যা অ্যান্ড্রয়েড ৮.০ ওরিও বা তার পরের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সংস্করণের জন্য ডিজাইন করা হয়নি।
গুগল প্লে স্টোরে ‘প্লে প্রটেক্ট’ নামে ম্যালওয়্যার সুরক্ষা ডিফল্ট আকারে রয়েছে। কিন্তু অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অপরিচিত উৎস থেকে এপিকে ফাইল বা থার্ড পার্টি স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করেন। খোদ গুগল প্লে স্টোরেই ক্ষতিকর অ্যাপ রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় খবর পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা আগে থেকেই ইনস্টল করা ম্যালওয়্যারসহ ডিভাইস সরবরাহ করছেন।
গত বছর অ্যাভাস্ট থ্রেট ল্যাবসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনভিত্তিক জেডটিই, আর্কোস ও মাইফোনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস প্রি-ইনস্টল করা ম্যালওয়্যারসহ বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। সে সময় গুগল সার্টিফায়েড নয়, এমন সাশ্রয়ী অ্যান্ড্রয়েড ফোন ক্রয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
অ্যাভাস্টের নিরাপত্তা গবেষকদের দাবি, সাশ্রয়ী বেশকিছু অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ‘কসিলুন’ নামের অ্যাডওয়্যার প্রি-ইনস্টল করা থাকে, যা কাজে লাগিয়ে ওই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করা সম্ভব। এসব ফোনে থাকা অ্যাডওয়্যার স্ক্রিনের ওপর আরেকটি নকল স্ক্রিন তৈরি করে। ব্যবহারকারী মোবাইলের ব্রাউজার থেকে কোনো ওয়েবসাইটে গেলে সেই ওয়েবসাইটের স্ক্রিনের ওপর একটি স্তর সৃষ্টি করে।