আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধের পর তাদের কাস্টমার কেয়ার সেবাও পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। শুক্রবার সারাদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আলেশা মার্টের কাস্টমার কেয়ার নম্বর ১৬৭৩১-এ ফোন করে কোনো প্রতিনিধিকে পাননি বহু সংখ্যক গ্রাহক। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পণ্য ও টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার আলেশা মার্ট ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিরাপত্তাজনিত কারণে আলেশা মার্টের সব অফিসিয়াল কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
আলেশা মার্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বুধবার কিছু লোক তাদের অফিসে গিয়ে কর্মীদের গায়ে হাত তুলেছে এবং বল প্রয়োগের চেষ্ট করেছে। এসব লোক তাদের গ্রাহক নন। তাদের কোনো ধরনের পাওনা পরিশোধের দিনও ছিল না। এ জন্য অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাওয়ার পরই পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা হবে। যদিও ওইদিন আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মনজুর আলম শিকদার ফেসবুক পেজে এক ঘোষণায় বলেছেন, দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অন্যান্য সকল কার্যক্রম চলবে। তিনি গ্রাহকদের প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করার পরামর্শ দেন।
কিন্তু শুক্রবার সারাদিন অনেক গ্রাহক কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানানো হয়- তাদের সব প্রতিনিধি ব্যস্ত আছেন।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আলেশা মার্ট তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে, এটা তিনি পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আলেশা মার্ট কিছু না জানালেও মন্ত্রণালয় স্বউদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের কাছে বহু মানুষের পাওনা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলেশা মার্টের কাছে কত মানুষের পাওনা আছে তা জানার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট থেকে কিছু তথ্য পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাতে দেখা গেছে, এবছর ১ জানুয়ারি কার্যক্রম চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত আলেশা মার্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই হাজার এক কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা হয়েছে। কোম্পানিটি তুলে নিয়েছে এক হাজার ৯৯৯ কোটি দুই লাখ টাকা। তাদের অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র দুই কোটি ৭ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটিকে কেউ ঋণ দিতে প্রস্তুত নয়। এমনকি এই কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করতে চাইলেও কেউ কিনতে চাচ্ছে না।
গত পাঁচ মাস ধরে আলেশা মার্ট ক্রেতাদের পণ্য বা রিফান্ড কোনোটাই দিতে পারছে না। কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না গত তিন মাস ধরে।
শুক্রবার নাহিদ হোসেন নামের আলেশা মার্টের একজন গ্রাহক বলেন, পাওনা টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় বারবার আলেশা মার্টের অফিসে হামলা করছেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মনজুর শিকদার বলেছেন তার প্রতিষ্ঠানের পাওনাদার ৭ হাজার। কিন্তু গ্রাহকরা মনে করেন এই সংখ্যা বহুগুণ বেশি হবে। আলেশা মার্ট প্রকৃত তথ্য গোপন করছে। ফলে ক্রেতা, সরবরাহকারী, কর্মী সবাই হতাশ।