সরকারের লক্ষ্য ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলা উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, এখন ১০ কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং করছেন।
তিনি বলেন, প্রতারণা ও হয়রানির শিকার না হয়ে ১০ কোটিরও বেশি নাগরিক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল ওয়ালেটের মাধ্যমে পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি আর্থিক লেনদেন করছেন। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতি, অপচয় এবং হয়রানি দূর করার পাশাপাশি গ্রাম-শহর, নারী-পুরুষ ও নবীন-প্রবীণের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার, এটিএম কার্ড ব্যবহার শুধু ক্যাশলেস সোসাইটি গড়া নয়, ই-গভর্মেন্ট প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর আইসিটি ভবনে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস- ২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন আজ থেকে ১২ বছর আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু করেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই সময়ে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে ২০২১ সালে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবো তখন বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের মর্যাদাশীল, প্রযুক্তিনির্ভর, ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী এই অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি, রূপকল্প ঘোষণার সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক যে অবস্থা ছিল সেটিকে বিবেচনা করে এটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি।
তিনি বলেন, সেসময় বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলারের কম। বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমা ছিল ৪২ শতাংশের উপরে। বিদ্যুতের সংযোগ ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ ঘরে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইট ছিল অত্যন্ত অল্প সংখ্যক। ১২ থেকে ২০টি ওয়েবসাইট ছিল। ই-মেইল ব্যবহারের কোনো চর্চা ছিল না। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ছাড়া ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছিল না। গ্রাম, ইউনিয়ন তো পরের কথা, বিভাগ-জেলা সদর পর্যন্ত ২০০৯ সালের আগে আমাদের কোনো ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছিল না। আমাদের আইসিটি শিল্পের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। তরুণদের আইসিটি শিল্পে কর্মসংস্থান তো দূরের কথা, প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। প্রাইমারি, হাইস্কুল তো দূরের কথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার ছিল না।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল দেশের ১৭ কোটি মানুষ পাচ্ছে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প ঘোষণা করেন তখন তা ছিল একজন রাজনৈতিক নেতা শেখ হাসিনার। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দায়িত্ব লাভের পর ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প হয়েছে দেশের সব জনগণের।
বিগত ১২ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আইসিটি খাতে প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ২০ লাখ। বর্তমানে আইসিটি খাতে রপ্তানি ১ দশমিক ৩ মার্কিন ডলার। অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং খাত থেকে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে সাতশো মিলিয়ন ডলার আয় করছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সঠিক অবকাঠামো গড়ে উঠার কারণে এসব সম্ভব হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে পরে লোগো উন্মোচন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রমুখ।