দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের ১৬২টি দেশের ৪৫৩৪টি দলকে হারিয়ে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২১ এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশ। নাসা বেস্ট মিশন কনসেপ্ট ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের খুলনা থেকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নাসাতে মনোনয়ন পাওয়া দল টিম মহাকাশ।
টিম মহাকাশের উদ্ভাবিত টুলস ‘এআরএসএস-অ্যাডভান্সড রিগোলথ স্যাম্পলার সিস্টেম’ মূলত মহাকাশচারীরা ভিনগ্রহের পৃষ্ঠে অভিযানের সময় মুক্তভাবে উড়তে থাকা ধুলিকণা নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে পারবে।
চাঁদে বিগত মানব মিশনগুলোতে মহাকাশচারীরা পৃষ্ঠতলে উপস্থিত ধূলিকণার মধ্যে কাজ করতে সমস্যার সম্মুখীন হয় বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। কম গ্রাভিটিতে মূলত ধূলিকণা গুলো সহজেই উৎক্ষিপ্ত হয়ে ভাসতে থাকে, ফলে নমুনা সংগ্রহ করতে কষ্ট হতো মহাকাশচারীদের, একই সাথে মহাজাগতিক রেডিয়েশনের কারণে আয়নিত হওয়ায় তা স্পেসস্যুটের গায়ে লেগে থেকে স্যুট ড্যামেজ করার মত পরিস্থিতি তৈরি করতো।
টিম মহাকাশ এই সমস্যার কার্যকর একটি সমাধান বের করে একটি টুলসেট উদ্ভাবন করে যেটি এই ধুলিকণাগুলোকে আবদ্ধ চেম্বারে আটকে ফেলে এবং ধুলিকণাগুলোকে ভেসে থাকার মত পরিস্থিতি তৈরি করতে দেয় না।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২১ তে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মিত হচ্ছে আমাদের তরুণদের হাত ধরে। তরুণদের নিয়ে গড়া খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত টিম মহাকাশ বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছে। বাংলাদেশে বেসিস, বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের মাধ্যমে এ আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের দল দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি টিম মহাকাশ এবং বেসিসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, এ বছর আমাদের লক্ষ্যই ছিল গত আসরগুলোর তুলনার ভালো করার। ২০১৮ সালে আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম কিন্ত দ্বিতীয়বারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নে খেতাব অর্জন নি:সন্দেহে বড় অর্জন। আমরা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে যাত্রা অব্যাহত রেখেছি, এ অর্জন আমাদের প্রচেষ্টার পথে আরেকটি বড় মাইলফলক।
টিম মহাকাশের দলনেতা সুমিত চন্দ বলেন, নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারাটা সবসময় গর্বের। আমরা এমন একটা সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করেছি যেটা নিয়ে নাসাসহ পৃথিবীর বড় বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই পৃথিবীর বড় বড় সমস্যার সমাধান বের করে ফেলতে পারে সেটা আবারও দেখিয়ে দিয়েছি আমরা। গত বছর থেকে আমরা এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি যার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান বেসিসের।
বেসিস এবং বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের সহযোগিতায় আয়োজিত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে আট শতাধিক প্রকল্প জমা পড়েছিলো। অসম্পূর্ণ প্রকল্প বাতিল করার পর যাচাই-বাছাই শেষে ১২৫টি প্রকল্পের প্রতিনিধিরা ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী হ্যাকাথনে অংশ নেয় এবং সেরা ২৭টি প্রকল্প নাসার জন্যে বাংলাদেশ থেকে মনোনীত করা হয়। বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্রগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) এ আয়োজিত হয়।