গত বছর বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের সরবরাহ কমলেও স্বল্প মূল্যের ফিচার ফোনের বিক্রি আগামী তিন বছর ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে মনে করছেন গবেষকরা। গত বছরে এ ধরনের ফোনের চাহিদা ২৫২ শতাংশ বেড়েছে। আগামী ৩ বছরে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আসবে এ ধরনের ফোন থেকে। ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে এ ধরনের ফোনের চাহিদা বেশি।
২০২১ সালের মধ্যে ফিচার ফোনের ক্রমযোজিত পাইকারি রাজস্ব প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেকর্ড গড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ ধরনের ফোনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার বলে মনে করা হচ্ছে ভারতকে। এর পরই আছে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়া।
গুগলের ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড বাজারে আসার পর স্মার্টফোনের বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। তবে প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালে এসব ফোনের সরবরাহ কমেছে। কিন্তু তার বিপরীতে ফিচার ফোনের বাজার বাড়ছে। কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্কলন হলো, চলতি বছর ফিচার ফোনের বাজারের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এ বছর ৪০ কোটিরও বেশি ফিচার ফোন বিক্রি হবে। আর ২০২১ সাল নাগাদ এর সরবরাহ ১০০ কোটি ইউনিট ছাড়িয়ে যাবে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের পরিচালক পিটার রিচার্ডসনের মতে, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাই মূলত ফিচার ফোনের বাজারে এ উল্লম্ফনের প্রধান নিয়ামক হবে। যেখানে চলতি বছর ফিচার ফোনের বাজারের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই তাদের দখল থাকবে। বিশ্বব্যাপী আগামী তিন বছরে যে ১০০ কোটি ইউনিট ফিচার ফোন সরবরাহ হবে, এর মধ্যে প্রায় ৮০ কোটি ইউনিটই যাবে এ অঞ্চলে। যেখানে বিশ্বব্যাপী ফিচার ফোন বাজারের তিন বছরের ক্রমযোজিত রাজস্ব হবে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি ডলার।
ভারত এখনো ফিচার ফোনের সবচেয়ে বড় বাজার। এর কাছাকাছি রয়েছে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়া। আফ্রিকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে চীনা ব্র্যান্ড আইটেল ও টেকনো।
কাউন্টার পয়েন্টের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্ট ফিচার ফোনের বাজারে এগিয়ে আছে আইটেল ও এইচএমডি গ্লোবাল। ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্ট ফিচার ফোনের বাজারে আইটেল ও নকিয়া ব্র্যান্ডের ফোন তৈরি করে এইচএমডি গ্লোবাল ১৪ শতাংশ করে বাজার দখলে রেখেছ। ১১ শতাংশ দখলে রেখেছে জিও। স্যামসাংয়ের দখলে বাজারের ৮ শতাংশ। এরপর ৬ শতাংশ দখল নিয়ে বাজারে রয়েছে টেকনোর ফোন।
স্মার্টফোনের ব্যবহারে এত বৈচিত্র্য সত্ত্বেও ফিচার ফোনের বাজার প্রবৃদ্ধি এমন আগ্রাসী হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।
ভোক্তাদের সামর্থ্যই এখানে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। জনসংখ্যা পিরামিডের একেবারে তলানিতে যারা আছেন, তারা এখনো মাঝারি মানের স্মার্টফোন এবং প্রয়োজনীয় মোবাইল ডাটা কেনার সামর্থ্য রাখেন না। ফিচার ফোনের বাজার তাদের ওপরই নির্ভরশীল।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহারের সুবিধার কারণেও ফিচার ফোনের চাহিদা বাড়ছে। যেমন অবকাঠামো নির্মাণ খাতে প্রতিকূল পরিবেশে একটি বাটন চেপেই কথা বলতে পারার (পুশ টু টক— পিটিটি) মতো প্রযুক্তির চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হয়ে উঠতে পারে ফিচার ফোন।
ব্যাটারি লাইফও বেশ কিছু ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ যেমন আফ্রিকার অনেক দেশেই প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। যেমন নাইজেরিয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ পয়সা খরচ করে পাবলিক চার্জিং স্টেশনে গিয়ে মোবাইলে চার্জ দেন। তাদের জন্য বেশিক্ষণ চার্জ থাকবে এমন সেলফোনই কাম্য।