কভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালে বিশ্বে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক কাজ ও শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছিল। পাশাপাশি চিপ সংকট এসব ডিভাইস উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই ২০২২ সালকে বরণ করে নিয়েছে বিশ্ববাসী। তবে নতুন বছরে এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতে সেলফোন ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যয় বাড়বে।
সম্প্রতি ভারতে টেলিযোগাযোগ খাতে ২০-২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের পরিষেবা গ্রহণ ব্যয় বাড়াবে। কেননা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ পরিষেবা বাজারের দেশটি পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভজি সেবা প্রদানে প্রস্তুতি নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
যদিও ফাইভজি পরিষেবাগুলো টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ ও ডিজিটাল সেবা থেকে আয়ের সুযোগ দেবে, কিন্তু এগুলো ব্যবহারে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে। বিশেষ করে নিলামে এয়ারওয়েভ প্রতিষ্ঠানগুলোয় অতিরিক্ত খরচের বিশাল অংশ বহন করতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাশ্রয়ী মূল্যের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহারের দিক থেকে শীর্ষ দেশ হচ্ছে ভারত। খরচের চাপ ও বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্যাকেজমূল্য বাড়াতে হবে।
ভারতে টেলিকম খাতে ঋণের হারও ঊর্ধ্বমুখী। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ খাতে ঋণের পরিমাণ ৪ দশমিক ৭ লাখ কোটি রুপিতে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে আইসিআরএ। সমগ্র ভারতে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সাশ্রয়ী মূল্যে স্পেকট্রাম ক্রয়ের দাবি জানিয়েছে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।
ফিচ রেটিংস করপোরেটের সিনিয়র ডিরেক্টর নীতিন সোনি বলেন, সম্প্রতি যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে তা এ খাতের জন্য ইতিবাচক। বর্ধিত মূল্যে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এয়ারটেল ও জিয়োর পর্যাপ্ত অর্থ ও সক্ষমতা রয়েছে। তবে ভোডাফোন কিছুটা সমস্যার মুখে পড়বে। স্পেকট্রাম নিলামের স্পষ্টতা নির্ধারিত হওয়ার পর আগামী ১২ মাসে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়ানোর আরেকটি উদ্যোগ নেবে বলেও জানান তিনি।
ক্রিসিল রেটিংসের তথ্যানুযায়ী, সম্প্রতি দাম বাড়লেও প্রতি গিগাবাইট ইন্টারনেটের জন্য ভারতে ৩০ সেন্ট ব্যয় এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সাশ্রয়ী মূল্যের ডাটা প্ল্যান। পাশাপাশি মাত্র ১০ সেন্টেও সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ডাটা প্যাকেজ ব্যবহার করা যায়।
ক্রিসিল রিসার্চের পরিচালক ইশা চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি গিগাবাইট ইন্টারনেটের জন্য ৮-১০ ডলার এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের ডাটা প্যাকেজের জন্য ৬০ সেন্ট থেকে ২ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। সে হিসেবে ভারতের টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনো দাম বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
টেলিকম শিল্পের জন্য সরকার ঘোষিত উদ্দীপনা প্যাকেজ অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে। বিশেষ করে ভোডাফোন আইডিয়া বেশি উপকৃত হয়েছে। কেননা প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে আসছিল।
মুম্বাইভিত্তিক এক গবেষক জানান, ফাইভজি স্পেকট্রামের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়ার পর টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কেননা ফাইভজি সেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্পেকট্রাম ক্রয় ও অবকাঠামো গঠনে বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে এ খাতে মূল্য বাড়ানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।