প্রযুক্তি সেবার ইতিহাসে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট সাইবার অপরাধের ঘটনা; হাজার কোটি ডলারের বেআইনি লেনদেন হয়েছে গেল বছরেই।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘চেইনঅ্যানালাইসিস’-এর দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালে অন্তত এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ডিজিটাল মুদ্রা পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন বেআইনি অনলাইন ঠিকানায়। ২০২০ সালে এর আকার ছিল ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলার।
২০২২ সালের শুরুতেই বেআইনি অ্যাকাউন্টগুলোর হাতে অন্তত এক হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে বলে জানিয়েছে ‘চেইনঅ্যানালাইসিস’। এর সিংহভাগ ক্রিপ্টোকারেন্সির চুরির সঙ্গে জড়িত ওয়ালেটে আছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এক্ষেত্রে ‘র্যানসমওয়্যার’, ‘পনজি স্কিম’ এবং অন্যান্য সাইবার প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ালেটগুলোকেই ‘বেআইনি ঠিকানা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
২০২১ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেনের মোট আকার ছিল ১৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ০.১৫ শতাংশ লেনদেন ছিল সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট। চেইনঅ্যানালাইসিস বলছে, ০.১৫ শতাংশ থেকে আরো বাড়তে পারে এই লেনদেনের হার; সাইবার অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো ওয়ালেট খুঁজে বের করছে প্রতিষ্ঠানটি। আর সব মিলিয়ে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ৫৫০ শতাংশ।
ক্রিপ্টোকারেন্সি অপরাধবিষয়ক আগের প্রতিবেদনে চেইনঅ্যানালাইসিস জানিয়েছিল, ২০২০ সালের সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের ০.৩৪ শতাংশ ছিল সাইবার অপরাধ সংশ্লিষ্ট। সেটি এখন বেড়ে ০.৬২ শতাংশে পৌঁছেছে।
এ প্রসঙ্গে চেইনঅ্যানালাইসিস বলছে, “বহুলপ্রচলনে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে সাইবার অপরাধে ক্রিপ্টোকারেন্সির সংশ্লিষ্টতা, এতে বাড়ছে সরকারি বিধিনিষেধ আরোপের আশঙ্কা। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী এর ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।”
চেইনঅ্যানালাইসিসের প্রতিবদেন অনুযায়ী, তহবিল চুরি আর প্রতারণার হার বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ‘ডিসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স’ বা ‘ডিফাই’ প্রযুক্তি। ২০২০ সালে ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি হয়েছিল ‘ডিফাই’ প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে। কিন্তু ২০২১ সালে ‘ডিফাই’ প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি হয়েছে ২৩০ কোটি ডলারের।
২০২১ সালে ‘ডিফাই’ প্ল্যাটফর্মের লেনদেন বেড়েছে ৯১২ শতাংশ। “অপরাধীরা যে প্রায়শই নতুন প্রযুক্তির সুযোগ নেয়, ডিফাই সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্রমবর্ধমান হার তারই উদাহরণ”– রয়টার্সকে পাঠানো এক ইমেইলে বলেছেন চেইনঅ্যানালাইসিসের প্রধান গবেষক কিম গ্রাউয়ার।