সংবাদ ও টিভি চ্যানেলের ব্যবসা শুরু করছে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। দ্রুত বর্ধনশীল কন্টেন্ট স্ট্রিমিং বাজারে প্রবেশ করে রীতিমতো নতুন মিডিয়া মোগল হয়ে উঠতে চাইছে আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপলের এক হাজার আসনবিশিষ্ট স্টিভ জবস থিয়েটারে গতকালই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার কথা। এতে যোগ দেয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন হলিউডের নামিদামি তারকারাও। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন জেনিফার অ্যানিস্টোন, রিজ উইদারস্পুন ও স্টার ওয়ার্সের পরিচালক জে জে অ্যাব্রামস।
ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রিমিং ব্যবসার মধ্য দিয়ে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, হুলুর মতো স্ট্রিমিং মিডিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে যাচ্ছে অ্যাপল। নতুন কন্টেন্ট তৈরি ও স্ট্রিমিং সার্ভিসের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে কোম্পানিটি ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে বলে জানা গেছে। শুধু তা-ই নয়, সংবাদ প্রকাশকদের নিয়ে নতুন একটি প্লাটফর্মও প্রকাশ করবে অ্যাপল। এ দলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ফক্সের মতো সংবাদ সংস্থা রয়েছে বলে বেশকিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ উচ্চাভিলাষী অ্যাপল। আয়ের অর্ধেক দেয়ার দাবি করার কারণে নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো অনেক স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমই অ্যাপলের সঙ্গে থাকছে না।
দ্য ভার্জের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচবিও, শোটাইম ও স্টার্জের মতো বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান তৈরি করতে অ্যাপল এখন কন্টেন্ট স্টোর গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছে।
২০১১ সালের আগস্টে স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর অ্যাপলের দায়িত্ব নেন টিম কুক। ২০১১ সালে জবস যখন মারা যান তখন অ্যাপলের বাজারমূল্য ছিল ৩০ হাজার কোটি ডলার, বর্তমানে যা তিন গুণ বেড়েছে। কুকের হাত ধরে অ্যাপল এক বিশাল ক্ষমতাশালী কোম্পানি হিসেবে গড়ে উঠেছে। নাম করে নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড হিসেবে। কিন্তু আইফোনের বিক্রি কমে যাওয়ায় অ্যাপল এ মুকুট এবার হারাতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আইফোনকে এ প্রজন্মের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সফল ভোক্তাপণ্য হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী আইফোন বিক্রি হয়েছে ২০০ কোটি ইউনিটেরও বেশি। শুধু এই একটি পণ্য বিক্রি করেই কোম্পানিটি ২৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার আয় করেছে। কিন্তু সম্প্রতি আইফোনের বিক্রি কমে গেছে। জানুয়ারিতে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো আয় ও মুনাফা কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। মূলত আইফোন বিক্রি কমে যাওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আয়ের উেস বৈচিত্র্য আনতে যাচ্ছে কোম্পানিটি।
অ্যাপলের ‘সার্ভিসেস সেক্টরে’ পেয়িং সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ৩৬ কোটি। অ্যাপলের এ খাতভুক্ত সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইটিউনস, অ্যাপল মিউজিক, দ্য অ্যাপ স্টোর, আইক্লাউড ও অ্যাপল পে। সর্বশেষ প্রকাশিত প্রান্তিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ওই তিন মাসে এ খাত থেকে অ্যাপলের আয় হয়েছে রেকর্ড ১ হাজার ৯০ কোটি ডলার। যদিও এটি ওই সময়ের মোট আয়ের কিয়দংশ মাত্র। আয়ের জন্য অ্যাপল এখনো আইফোনের ওপর খুবই নির্ভরশীল।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাল্টিক্যারিয়েট সলিউশনের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ম্যাক্স উলফ অ্যাপল প্রধানের মিডিয়া ব্যবসা চালু করা প্রসঙ্গে বলেন, নিজেদের ‘গণ্ডির’ ভেতরে গ্রাহকদের ধরে রাখার ইচ্ছা থেকে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে অ্যাপলের নতুন পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ধরন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কন্টেন্টের বিষয়বস্তু, সেবাগ্রহণের খরচ ও তীব্র প্রতিযোগিতার স্ট্রিমিং বাজারে নিজেদের অনন্যতা প্রমাণে অ্যাপলের পদক্ষেপ কেমন হবে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই।
এ বিষয়ে বিশ্লেষক অভি গ্রিনগার্টের অভিমত, যদি পর্যাপ্ত কন্টেন্ট থাকে তাহলে গ্রাহকরা অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করবেন। তবে এটি নতুন কিছু নয়, ফলে এখানে ভালো করা কঠিন।
তবে স্ট্রিমিংয়ের জগতে শুধু নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন নয়, বিনোদন মিডিয়ার আরো বেশকিছু জায়ান্টের মুখোমুখি হতে হবে অ্যাপলকে। এমনই এক প্রতিষ্ঠান ওয়াল্ট ডিজনি। চলতি বছরই ডিজনি প্লাস নামে নতুন স্ট্রিমিং সেবা চালু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স