বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাতের অন্যতম উদ্যোক্তা লুনা সামসুদ্দোহা। উদ্ভাবনী বিশ্ব প্রযুক্তি পরিমন্ডলে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন দোহাটেক নিউমিডিয়ার চেয়ারপার্সন হিসেবে।
এক বছর হলো লুনা সামসুদ্দোহা আমাদের মাঝে নেই। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীর ১৭ তারিখ সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শুধু নারী উদ্যোক্তাদের কাছে নয়, সকল নবীন প্রযুক্তি কর্মীদের কাছে এক আলোকবর্তিকা নাম – লুনা সামসুদ্দোহা।
যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে একটি রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়েছেন পরিচালনা বোর্ড প্রধান হিসেবে। আমৃত্যু তিনি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।
বাংলাদেশে ইগভর্ননেন্স তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর হাতে গড়া ‘দোহাটেক’ বড় ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৭ সালে ভোটার এনরোলমেন্ট সফটওয়ার তৈরির পাশাপাশি সবার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রও সম্ভব হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী সেবায়।
ইলেকট্রিক গভর্নমেন্ট প্রক্রিওরমেন্ট বা ইজিপি এবং বাংলাদেশ সরকারের এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন ফর দ্য পুওররেস্ট (ইজিপিপি) প্রকল্পের এমআইএস সিস্টেমও আসে দোহাটেক থেকে।
নব্বই দশকের প্রারম্ভে লুনা শামসুদ্দোহা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেমেছিলেন প্রায় শুন্য হাতে। ১৯৯২ সালে ঢাকার পল্টন লেনে মাত্র দু’জন কর্মী নিয়ে তিনি ‘দোহাটেক’-এর যাত্রা শুরু করেছিলেন।
বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে একশতেরও বেশি শুধু মেধাবি কম্পিউটর ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন। বুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষ করে অনেক মেয়েই কাজ করেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে। শুরুতে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টে’র কাজ শুরু করতো ‘দোহাটেক’।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন লুনা সামসুদ্দোহা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম উদ্যোক্তা লুনা সামসুদ্দোহা সবসময় মনে করতেন, তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে এ দেশের প্রতিটি মেয়ে এগিয়ে যাবে। সবাইকে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হতে হবে তা নয়, তবে টেকনোলজির টুলসগুলো অবশ্যই জানতে হবে।
২০১৮ সালে দেশের প্রথম নারী হিসেবে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান লুনা সামসুদ্দোহা। এসএমই ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক লুনা বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির একজন ট্রাস্টি ছিলেন। লুনা সামসুদ্দোহা ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
একসময় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নানান ধরনের সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথেও যুক্ত হন। বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে গ্লোবাল উইমেন ইনভেন্টরস অ্যান্ড ইনোভেটরস নেটওয়ার্ক (গুইন) সম্মাননা পান তিনি।
১৯৮৫ সালে দ্য এক্সিকিউটিভ সেন্টারের ব্যবস্থাপনা সহযোগী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার প্রতিষ্ঠান দোহাটেক নিউ মিডিয়া সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের সংস্থা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, করপোরেশনের সফটওয়্যার সলিউশন দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।