ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষা বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ ।আগামী পঞ্চাশ বছরে বাংলা ভাষা কেবল জনসংখ্যার হিসেবেই নয় ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ব্যবহারের দিক থেকেও বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার প্রয়োগ সহজতর করতে ইতোমধ্যে সরকার ১৫৯ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি টুলস উন্নয়নসহ প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে কাজ করছে। মন্ত্রী প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যববহারকে আরো এগিয়ে নিতে বাংলায় গুণগত কনটেন্ট এবং সকল মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় মোবাইল অপারেটর রবি আয়োজিত প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মুদ্রণ প্রযুক্তিতে রোমান হরফ থেকে বাংলা হরফ ৩২৪ বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে গত এক দশকে পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিশালী ভাষার সমান্তরালে প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে বলেন, বাংলা পৃথিবীর অন্য দশটা ভাষার মতো সাধারণ ভাষা নয়। বাংলা ভাষার শক্তি অনেক সুদৃঢ়। বিশ্বের কোন ভাষারই এমন কোন উচ্চারণ নেই যা বাংলা হরফ দিয়ে লেখা যায়না।
তিনি প্রসঙ্গত বলেন যে ইংরেজি বর্ণমালা একটি দুর্বর বর্ণমালা। এতে বহু উচ্চারণ প্রকাশ করার বর্ণ নেই। আরবীতেও অনেক উচ্চারণ লেখা যায়না। এমনকি চীনা ভাষায় হাজার হাজার বর্ণ থাকার পরও ল লেখা যায়না।
মন্ত্রী বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরে বলেন, অপটিমা মুনির টাইপ রাইটার চালুর মধ্য দিয়ে তিনি প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার অভিযাত্রা শুরু করেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের আগে ডিজিটাল যন্ত্রে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা লেখার কোন উপায়ই ছিলোনা। এই সফটওয়্যারে শীশার টাইটের ৪৫৪ বর্ণকে মাত্র ২৬টি বোতামে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের অবস্থা এমন ছিলো যে মেকিন্টোস কম্পিউটারে এসেম্বলী ভাষায় বাংলা সফটওয়্যারের প্রোগ্রামিং করার লোক ছিলোনা দেশে। ভারতের দেবেন্দ্র যোশিকে দিয়ে একটি বাংলা সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে কম্পিউটারে বিজ।হানসম্মত বাংলা ব্যবহারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৩ সাল এর মধ্যে দেশের প্রায় সকল পত্রিকা এবং বইসহ বিভিন্ন প্রকাশনা বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রকাশনা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে প্রকাশনা ও মুদ্রণ শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয় বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত।
মন্ত্রী কম্পিউটার প্রযুক্তিতে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার মতো বাংলা লিখনের এই সুযোগটির জন্য এ্যাপল কম্পিউটারের জনক স্টিভ জবসের উদ্ভাবনকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দেশের প্রথম ডিজিটাল সংবাদ সংস্থা আবাস-এর চেয়ারম্যান, সাংবাদিক মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রী প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বাংলা কনটেন্টের অপর্যাপ্ততা অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে ভাষা শক্তিশালী করার জন্য করপাস শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, সব কিছু এককভাবে কেবল সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কন্টেন্ট তৈরির বড় শর্ত মেধা সম্পদকে শক্তিশালী করা। এক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটরসহ টেলকোগুলো এগিয়ে আসলে তা মোটেও কঠিন হবে না। তিনি প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রয়োগে রবি আজিয়াটার উদ্যোগকে একটি অনুকরণীয় উদ্যোগ বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, একটি বিদেশি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি তার নামের মধ্যেও বাংলার প্রতি তাদের ভালবাসার স্বাক্ষর রেখেছে।