অনলাইনে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধে গুগল, ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টকে চাপ দেবে ব্রিটেন। সম্প্রতি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন ও ঘটনা বন্ধে দেশটির ভোক্তা এবং নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।
ব্রিটেনের সরকার জানায়, অনলাইনে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে যে খসড়া আইন প্রণয়ন করা হবে, সেখানে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারকারী, প্রতিষ্ঠান বা কোনো সেলিব্রেটির ব্যক্তিগত তথ্য চুরি রোধ, অবৈধ লেনদেন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনধিকার প্রবেশ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের সরকার জানায়, দেশের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান অফকম প্লাটফর্মগুলোয় ভুয়া ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে কিনা, সেটি যাচাই করবে। তদন্তসাপেক্ষে অফকম প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারবে অথবা ১ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড বা ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা বার্ষিক আয়ের ১০ শতাংশ কেটে রাখতে পারবে।
এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের কালচার সেক্রেটারি নাদিন ডরিস বলেন, অনলাইন নিরাপত্তায় নতুন যে আইন প্রণয়ন করা হবে, সেটি ভুয়া ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়া রোধ করবে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় মানুষ অনেকটাই অনলাইনকেন্দ্রিক জীবনযাপন শুরু করে। সে সময় গুগল, ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া বিজ্ঞাপনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
ব্যাংকিং শিল্প সংস্থা ইউকে ফাইন্যান্সের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রতারণার মাধ্যমে ৭৫ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড চুরি করা হয়; যা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির (এফসিএ) চাপের মুখে বেশকিছু অনলাইন পরিষেবা নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্লাটফর্মে আর্থিক পণ্যের বিজ্ঞাপন সীমিত করেছে।
কনজিউমার ক্যাম্পেইন গ্রুপ হুইচের প্রধান নির্বাহী আনাবেল হল্ট বলেন, নতুন আইনটি সোস্যাল মিডিয়া ও সার্চ ইঞ্জিনের ভুয়া ও প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের বিস্তার কমাবে। এসব বিজ্ঞাপন ব্যবহারকারীদের অনাকাঙ্ক্ষিত আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন করে। ব্রিটেন সরকার জানায়, অনলাইন বিজ্ঞাপন খাতের নিয়ন্ত্রণে পাবলিক কনসাটেশনও চালু করা হচ্ছে। এজন্য বর্তমানে প্রচলিত তদারক ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা হবে অথবা নতুন সংস্থা গঠন করা হবে।
নেতিবাচক ছবি প্রচার কিংবা অস্ত্র বিক্রির মতো অবৈধ কার্যকলাপের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে সেগুলো কঠোর নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে বলেও জানানো হয়। ব্রিটেন সরকার জানায়, প্রভাব বিস্তারকারীরা যদি টাকার বিনিময়ে ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বিষয়টি প্রমাণ না করতে পারেন তাহলে তাদেরও কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিশুদের জন্য বানানো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধে আইন প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন। নিজের প্রথম স্টেট অব ইউনিয়নের বক্তব্যে কংগ্রেসের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। বাইডেন বলেন, শিশুদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা আরো শক্তিশালী করতে হবে, তাদের উদ্দেশ্য করে বানানো বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সেসব পরিবর্তন নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য ফান্ড চাইবে হোয়াইট হাউজ। আগামী বছরের বাজেটে মানসিকতার ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব বিষয়ে গবেষণার জন্য ৫০ লাখ ডলার চাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বাইডেন। তিনি একটি ন্যাশনাল সেন্টার অব এক্সিলেন্স অন সোস্যাল মিডিয়া অ্যান্ড মেন্টাল ইলনেস তৈরির কথাও ভাবছেন।