সভ্যতার আদিম যুগ থেকে এ পর্যায়ে আমাদের পৃথিবী বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা মহাকাশে ভিন্ন ভিন্ন গ্রহের ভেতর অদ্ভুত বস্তু কিংবা প্রাণের সন্ধান আমাদেরকে দিচ্ছেন । আবার কোন কোন গ্রহগুলোর কাঠামো বরফ না শিলা দ্বারা পরিবেষ্টিত এসব তথ্য আমরা জেনেছি। এবার বিজ্ঞানীরা মহাকাশে গ্রহে নতুন ধরনের বরফ খুঁজে পেয়েছেন। বলা ভাল এমন এক অদ্ভুত রূপে বরফের আবিষ্কার হয়েছে যা পৃথিবীতে এ যাবৎ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মহাকাশের দূরের জগতের অজানা গ্রহেই এমন বরফ থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন বিজ্ঞানীরা। বৃহস্পতির ডিসট্যান্ট মুন বা চাঁদে যখন ইউরোপা ক্লিপার মিশন পৌঁছোবে তখন সেই অভিযানেই পানির উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা হবে। বলা হচ্ছে, ইউরোপার পৃষ্ঠদেশের তলদেশে বরফের আকারে এই পানি সজ্জিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতির ডিসট্যান্ট মুনের জন্য যে মহাকাশ অভিযান হতে চলেছে, সেই ইউরোপা ক্লিপার মিশন শুরুর আগে বিজ্ঞানীরা বরফের একটি নতুন ধরন বা রূপ খুঁজে পেয়েছেন যা ওই দূরের গ্রহতেই থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই এই নতুন ধরনের বরফ নিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন। উচ্চ চাপের মধ্যে জলের বিভিন্ন উপকরণ পর্যালোচনা করে নতুন ধরনের ডাবড আইস-ভিআইআইটি আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি আসলে একটি মাঝামাঝি মাধ্যম এবং কিউবিক ফেজ, আইস-ভিআইআইটি এবং আইস-এক্স এই তিন ধরনের বরফের মাঝামাঝি একটি পর্যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের বরফ একদম অন্য রকমের। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের বরফের হদিশ পাওয়া যায়নি। তবে পৃথিবীর ম্যান্টেল অংশের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ উপাদান হতে পারে। এছাড়াও আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে কোনও জলের নমুনা সমৃদ্ধ গ্রহে এই ধরনের বরফ দেখা যায়। বৃহস্পতি গ্রহের বড় চাঁদের ক্ষেত্রেও থাকতে পারে এই বরফ।
নেভাডায় ইউএনএলভির এক্সট্রিম কন্ডিশন ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বিজ্ঞানীদের একটি দল উচ্চ চাপে জলের বৈশিষ্ট্য পরিমাপের জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন। জলের নমুনাটি প্রথমে হীরের বিপরীত প্রান্তের মধ্যে চেপে ধরা হয়েছিল – বিভিন্ন বরফের স্ফটিকের মধ্যে জমাট বাঁধান হয়েছিল। বরফটি তখন একটি লেজার হিটিং কৌশলের অধীন ছিল, যার ফলে এটি ক্ষুদ্র স্ফটিকের গুঁড়া-সদৃশ ক্লাস্টারে দ্রুত পুনঃক্রিস্টাল হওয়ার আগে অস্থায়ীভাবে গলে যায়। ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছিল চাপ। এরপর আস্তে আস্তে একটি কিউবিক আকার নিয়েছিল ওই ‘ওয়াটার আইস’।
পানির উপরকরণগুলোকে সংকুচিত করে তিনটি হিরের মধ্যে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণু আলাদা করে নেওয়া হয়। তারপর একাধিক ভিন্ন অ্যারেঞ্জমেন্টের মাধ্যমে এই নতুন ধরনের বরফ আইস-ভিআইআইটি আবিষ্কার হয়েছে। এই নতুন ধরনের বরফের আবিষ্কার এক্সোপ্ল্যানেটের গাঠনিক উপাদান বুঝতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে কোনও গ্রহতে এই উপকরণ অর্থাৎ নতুন ধরনের বরফ থাকলে তা বোঝাবে যে ওই গ্রহে বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি পরিবেশ হয়তো থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, লেজার হিটিং কৌশলটিই নয়, এটির প্রথম ধরণের, বিজ্ঞানীদের জলের বরফের একটি নতুন পর্যায় পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দেয়, তবে দলটি এটিও দেখেছিল যে আইস-এক্সে রূপান্তরটি পূর্বের ধারণার চেয়ে প্রায় তিনগুণ কম চাপে ঘটেছে।