ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসনের শুরুতেই ইউরোপের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা হ্যাকড হয়েছিল। ২৪ ফেব্রুয়ারির ওই হ্যাকিংয়ের হোতা রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
হ্যাকিংয়ের প্রভাব সম্পর্কে ইউক্রেইন কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত না জানালেও ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধের শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দেশটির সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা। হ্যাকিংয়ের ঘটনার প্রাথমিক ভুক্তভোগী ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট কোম্পানি ‘ভ্যায়াস্যাট’-এর ‘কেএ-এসএটি’ স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার দিনেই সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কটি।
ওই হামলায় বন্ধ ছিল ভ্যায়াস্যাটের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা, এর প্রভাব পড়েছিল ইউক্রেইন এবং দেশটির আশপাশের অঞ্চলে। ঘটনার কয়েকদিন পর ভ্যায়াস্যাট কারণ ব্যাখ্যা করতে “সাইবার ঘটনার” কথা বললেও, তার বিস্তারিত জানায়নি।
ভ্যায়াস্যাট হ্যাক হওয়ার ফলে নিজ দেশের সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সে প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা। তবে, হ্যাকিংয়ে যুদ্ধের শুরুতেই ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)’ ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি উভয় পক্ষ থেকে।
তবে নাম গোপন রাখার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, রাশিয়ার সামরিক হ্যাকাররাই ওই ঘটনার হোতা ছিল বলে নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ‘সাইবার সিকিউরিট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ)’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পায়নি প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ।
সেবাগ্রাহকদের স্যাটেলাইট টার্মিনাল ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ভ্যায়াস্যাটের কর্মকর্তারা। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন কেবল ‘কেএ-এসএটি’ নেটওয়ার্কের সেবাগ্রাহকরা।
ওই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে স্যাটেলাইট যোগাযোগ সেবাদাতাদের জন্য একটি যৌথ সাইবার নিরাপত্তা নির্দেশিকা দিয়েছে সিআইএসএ এবং এফবিআই। সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের উপর সাইবার হামলার হুমকি সম্পর্ক অবহিত আছে এবং কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড নজরে আসলেই তাৎক্ষণিকভাবে সেটি জানাতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের উত্তর হিসেবে সরাসরি সহিংসতায় না জড়িতে অবরোধ-নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি নিজ দেশের অবকাঠামোর উপর রাশিয়ার সাইবার হামলার আশঙ্কায় একের পর এক সতর্কতা জারি করেছে বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর রাশিয়ার সাইবার হামলার হুমকি বাড়ছে– গোয়েন্দা তথ্য থেকে এমন ইঙ্গিত মিলছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ রাশিয়ার চার সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ এনেছে বৃহস্পতিবার। গেল কয়েক বছর ধরে শক্তি খাত এবং ১৩৫ দেশের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।