বর্তমান সময়ের স্মার্টফোনের মতো অত্যাধুনিক ফিচার নেই পুরোনো সেই ফিচার ফোনগুলোতে আর তাই রসিকতা করে এককালের জনপ্রিয় ফিচার ফোনগুলোকে ‘ডাম্বফোন’ বা ‘বোকাফোন’ বলে ডাকেন অনেকেই।
ডাম্পফোনগুলো মূলত মৌলিক হ্যান্ডসেট অথবা ফিচার ফোন। আইফোনের তুলনায় এসব মোবাইল খুবই সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। যেমন কাউকে কল করা, কল রিসিভ করা এবং এসএমএস টেক্সট পাঠাতে পারে। আর আপনি যদি সৌভাগ্যবান হন তাহলে বড় জোর এই ফোনে রেডিও শুনতে পারবেন এবং খুবই প্রয়োজনীয় কিছু ছবি তুলতে পারবেন। তবে আপনি অবশ্যই এ ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ অথবা অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ডিভাইসগুলো মূলত নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বাজারে আসা প্রথম হ্যান্ডসেটগুলোর মতো। হিসাবরক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট ২০২১ সালের এক গবেষণায় জানিয়েছে যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ জন মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে একজনের হাতে ডাম্পফোন রয়েছে।
ইউএসউইচ ডটকমের মোবাইল বিশেষজ্ঞ আর্নস্ট ডকো জানিয়েছেন, ‘প্রথম মোবাইল ফোন হিসাবে আমাদের অনেকের কাছেই একটি ডাম্পফোন রয়েছে। ফলে এ ক্লাসিক হ্যান্ডসেটগুলো নিয়ে আমরা নস্টালজিক হয়ে পড়ব এটি খুবই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালে নোকিয়ার ৩৩১০ হ্যান্ডসেটটি আবার বাজারে নিয়ে আসা হয়, ২০০০ সালে ফোনটি প্রথম বাজারে এসেছিল। এ ফোনটি সব সময়ই সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায় ছিল। কথিত ‘ডাম্বফোন’-এর এ পুনরুত্থানের পেছনে চোখে পড়ার মতো ভূমিকা রাখছে তরুণ প্রজন্ম।
এই তরুণ প্রজন্মের ‘ডাম্বফোন’ ব্যবহারকারীদের একজন রবিন ওয়েস্ট। পুরোনো ডাম্বফোন ব্যবহার করেন বলে নিজের বন্ধু মহলেও ব্যতিক্রম তিনি; টিকটক বা ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করে পার হয় না তার দিন।
দুই বছর আগে ওয়েস্ট যখন তার পুরোনো স্মার্টফোন ছেড়ে কম দামে একটি ফোন কিনতে চাচ্ছিলেন তখন সেকেন্ডহ্যান্ডের দোকানে কমদামের ‘ব্রিক ফোনের’ দিকে তার নজর যায়। বর্তমানে তার হাতে থাকা হ্যান্ডসেটটি ফরাসি কোম্পানি মোবিওয়ারের তৈরি করা; যার মূল্য আট পাউন্ড। যেহেতু ফোনটি স্মার্টফোনের মতো কোনো কার্যক্রম নেই তাই মাসে বড় অঙ্কের বিল পরিশোধ করা নিয়েও তাকে চিন্তা করতে হয় না।
এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বলেন, ‘ব্রিক ফোন কেনার আগে আমি বোঝতে পারিনি যে স্মার্টফোন আমার জীবন থেকে কতমূল্যবান কিছু নিয়ে যাচ্ছিল। আমার স্মার্টফোনে অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপ ছিল এবং এগুলোর কারণে আমি সব সময়ই ফোনে ব্যস্ত থাকতাম তেমন একটা কাজ করতে পারতাম না।
লন্ডনের এ নাগরিক জানিয়েছেন তিনি আরেকটি স্মার্টফোন কেনার কথা ভাবছেন না। ওয়েস্টের মতো আরও অনেকেই এখন ডাম্পফোনের দিকে ঝুঁকছেন। সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান এসইএমরাশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গুগল সার্চে ডাম্পফোনের খোঁজ ৮৯ শতাংশ বেড়েছে।
তবে এটি সত্যি যে পারফরমেন্সের দিক থেকে ডাম্পফোনগুলো কোনোভাবেই সাম্প্রতিক অ্যাপল এবং স্যামসাংয়ের মডেলগুলোর সমপর্যায়ের হবে না। তবে ব্যাটারির জীবনকাল ও টেকসইয়ের দিক থেকে এসব আধুনিক ফোনকে ছাড়িয়ে যাবে ডাম্পফোনগুলো।
নিউইয়র্কভিত্তিক ডাম্পফোন নির্মাতা লাইটফোন তাদের পণ্যগুলোকে কিছুটা স্মার্ট করার চেষ্টা করে। যেমন এর ব্যবহারকারীরা সংগীত শুনতে পারে এবং পডকাস্ট ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া ব্ল–টুথ থেকে হেডফোনে সংযোগ দেওয়া যায়। তবে কোম্পানিটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তাদের ফোনে ‘কখনোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ক্লিকবাইট নিউজ, ইমেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজার থাকবে না।
‘লাইটফোন জানিয়েছে তাদের হ্যান্ডসেটের বিক্রি অনেক বেড়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে তাদের ডাম্পফোনের বিক্রি ১৫০ শতাংশ বেড়েছে। ডাম্পফোন হিসাবে তাদের হ্যান্ডসেটগুলো ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ছে। তাদের ডাম্পফোনের দাম ৯৯ ডলার থেকে শুরু হয়। লাইটফোনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কাইওয়েই ট্যাং বলেছেন বিস্ময়কর হলো আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল গ্রাহক হলো ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি তরুণরা।