কিশোরগঞ্জে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এসময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নুর এবং কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। আজ (বুধবার) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, সরকার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, মেহনতি জনতা, বাংলার মাটি ও মানুষকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে একসাথে সংযুক্ত করতে পেরেছে। শহর ও গ্রামে এখন ডিজিটাল বিভাজন কমে এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে দেশে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল অর্থনীতি। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ২০০৮ সালে দেশের মাত্র ৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট সেবা পেতো। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটিরও বেশি। এসময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারির সংখ্যা বেড়েছে ৪ গুণেরও বেশি। ইন্টারনেট ব্র্যান্ডউইথের মূল্য হ্রাস হয়েছে; অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল ডিভাইসকে হাতের নাগালে আনার পাশাপশি সকল সরকারি সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দেওয়া হয়েছে। জনগণ এখন ঘরে বসেই দুই শতাধিক নাগরিক সেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে গড়ে উঠছে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্ক এবং আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। তরুণ প্রজন্মকে সাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দেশে সাড়ে ছয় লক্ষ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার আছে। এ খাতে অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরুষের পাশাপশি নারীরাও যেনো সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আজ কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অষ্টগ্রাম-মিঠামইন উপজেলার তরুণ-তরুণী মুরাদ-লিজার মতো ফ্রিল্যান্সার আপওয়ার্ক-ফাইবারের মতো মার্কেটপ্লেসে কাজ করে ডলার উপার্জন করছে। ডলার উপার্জনের জন্য তাদেরকে কখনো আমেরিকায় যেতে হয়নি। কিশোরগঞ্জের মাটিতে বসে মেধা খাটিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করে আমেরিকার একটা কোম্পানিতে কাজ করে হাজার হাজার ডলার আয় করছে। এটাই হলো শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ অষ্টগ্রাম-মিঠামইন থেকে শুরু করে হাওড়-বাওড়-দ্বীপ দেশের সকল প্রত্যন্ত এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আজকে দেশের ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মাত্র ১৩ বছরে সজীব ওয়াজেদ জয় এর নেতৃত্বে প্রযুক্তি শিল্প থেকে রপ্তানি আয় দাড়িয়েছে প্রয ১.৪ বিলিয়ন ডলার। আমাদের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চাই। আমরা আশা করছি আগামী দেড় বছরের মধ্যে এই আইটি ট্রেনিং সেন্টার এর নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে এবং দুই বছরের মধ্যে এখানে আমরা কার্যক্রম শুরু করবো। এখান থেকে প্রতি বছর এক হাজার তরুণ-তরুণি প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নুর বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক বাংলাদেশের ভিত্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশ আসলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলারই আধুনিক রূপ। প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নাই। সরকার এজন্যই একটি প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছে। ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখানকার তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত একারণে যে আজ কিশোরগঞ্জে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। এর মাধ্যমে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন কিশোরগঞ্জবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। অথচ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় অনেকেই এই ঘোষণা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেছে। আমি অত্যন্ত গর্বিত হই, আত্মতৃপ্তি পাই, আবেগে আপ্লুত হই যখন শুনি আমার এলাকার ছেলেরা গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্যর বদলে অনলাইনে কাজ করে ডলার উপার্জন করছে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৬৪টি জেলায় আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। কিশোরগঞ্জ ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় আরো ১০টি জেলায় (মানিকগঞ্জ, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, বান্দরবান, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, দিনাজপুর ও মেহেরপুর) শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সেনাবহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১১টি জেলায় প্রায় ৭৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম; জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদসহ বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।