তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছেন, দেশের সফল স্টার্ট-আপরা প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হবে। কাজেই, উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্টার্ট-আপদের সৃষ্টি, উন্নয়ন ও সফলতা নিশ্চিতকরণ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। একারণে আমরা প্রতিটি হাই-টেক পার্কে স্টার্ট-আপদের জন্য বিনামূল্যে একটি করে ফ্লোর বরাদ্দ রেখেছি। সেখানে বিনামূল্যে স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্পেস দেওয়া হচ্ছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। “স্টার্টআপবান্ধব রাজস্ব নীতি” শীর্ষক দিনব্যাপী এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আগামী অর্থবছরকে স্টার্ট-আপবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়নের বছর হিসেবে স্মরনীয় করে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাঙালি তরুণরা জন্মগতভাবে সাহসী ও উদ্ভাবক। আমাদের দেশের মানুষ প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ার সাথে মোকাবেলা করেই এগিয়ে চলে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে জীবনযাপন করছে। যথাযথ নেতৃত্ব পেলে যে কোন বাধা অতিক্রম করে তরুণরা এগিয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, নলেজ বেইজড ইকোনমি গড়ে তুলতে নলেজ বেইজড ব্যুরোক্রেসি, পলিটিক্স ও সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিম বলেন, দেশের আইটি সেক্টরের বিকাশের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রনোদনা সুবিধা নিশ্চিত করেছে। আরো কিছু বিষয়ে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এরফলে দেশি-বিদেশি আইটি কোম্পানি এবং সম্ভাবনাময় স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার সুযোগ পাবে বলে আমরা আশা করছি। স্টার্ট-আপদের ব্যবসায় পরিচালনায় এনবিআর কোনো বাধা হবে না মর্মে তিনি জোর দিয়ে জানান।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের ইনোভেশন কার্যক্রমকে গতিশীল করে একটি ইনোভেশন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের অর্থায়নে ও বিশ্বব্যাংকের ঋণে মোট ৩৫৩.০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্টার্ট-আপদের জন্য ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন।
‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক আবুল ফাতাহ মো: বালিগুর রহমান জানান, এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব স্থাপনের পাশাপাশি কমন ফ্যাসিলিটি হিসেবে চারটি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এছাড়াও স্টার্ট-আপদের জন্য স্কেল-আপ প্রোগ্রাম ও মেন্টরিং করা হবে।
‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরামর্শক আব্দুল বারী বলেন, শুধুমাত্র ২০২১ সালেই, পুরো বিশ্বে স্টার্ট-আপ সমূহে প্রায় ৬৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টার্টআপসমূহ প্রায় ২৬৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, ভারতীয় স্টার্টআপগুলো পেয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশী স্টার্টআপগুলো পেয়েছে মোট ৪৩৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এরপরেও স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেক চ্যালেঞ্জ ফেস করছে। মেন্টরিং কিংবা বৈশ্বিক ফান্ড প্রাপ্তি থেকে শুরু করে স্টার্ট-আপবান্ধব রাজস্ব নীতি এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। স্টার্টআপদের হাত ধরেই প্রযুক্তি নির্ভর ভবিষ্যৎ অর্থনীতির চাকা ঘুরবে বিধায় এই সেক্টরে আমাদের আরো বেশি মনযোগ দিতে হবে।
কর্মশালায় আইসিটি বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।