বরিশালে ভোক্তার সাথে প্রতারণার অভিযোগে ‘ভিভো’ মোবাইল সেট কোম্পানির বিরুদ্ধে নোটিস প্রদান করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত ৫ এপ্রিল দপ্তরটির জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শাহ শোয়াইব মিয়া স্বাক্ষরিত এ নোটিসে অভিযুক্ত ভিভো মোবাইল সেট সার্ভিসিং সেন্টারে পাঠানো হয় ।
মোবাইল সেট বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীকে সোমবার (১১ এপ্রিল) শুনানীর জন্য থাকতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতারণার শিকার বরিশাল জেলা জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট মাসুদ হাওলাদারের দেওয়া অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর মাসুদ হাওলাদার নগরীর বগুড়া রোডস্থ স্মার্টফোন সেন্টার থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা মূল্যমানের ‘ভিভো’ ব্রান্ডের একটি মোবাইল সেট ক্রয় করেন। কিন্তু এর তিনদিন পরই সেটটিতে ত্রুটি দেখা দেয়। তিনি বিক্রেতার কাছে গেলে তারা তাকে ভিভো কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক ওই আইনজীবী নগরীর সদর রোডস্থ ফাতেমা সেন্টার নামক ভবনে অবস্থিত কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে গ্যারান্টির শর্তানুযায়ী সেটটি পরিবর্তন করে দেয়ার দাবি রাখেন। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত কর্মচারীরা তাতে কর্ণপাত না করে কিছু সময় পরে সেটটি ফেরত দিয়ে জানান ত্রুটির সমাধান হয়ে গেছে। এরপরও সেট কেনার ৫ মাসের মধ্যে সেটটিতে আরও তিনবার একই ত্রুটি দেখা দেয়। চতুর্থবার ত্রুটি নিয়ে গেলে ভিভোর কাস্টমার কেয়ারের কর্মচারীরা এটি আর সমাধান করতে পারবেনা বলে ক্রেতাকে জানিয়ে দেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মোবাইল সেটটিতে আবারও সমস্যা দেখা দিলে সেটি নিয়ে ওই আইনজীবী স্মার্ট ফোন সেন্টারে যান। সেখানে কর্মরত ভিভো কোম্পানির কর্মচারী সাব্বির ও দোকান মালিক আল-অমিন তাকে মোবাইল সেটের সমস্যা সমাধানে অস্বীকৃতি জানান। ভিভো মোবাইল সেট কোম্পানি ও বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে গত ৩ মার্চ ক্রেতা মাসুদ হাওলাদার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার বরিশাল জেলা কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে প্রতারণার শিকার আইনজীবী মাসুদ হাওলাদার জানান, কোম্পানির গুগল ওয়েভ সাইটের শর্তানুযায়ী মোবাইল সেটের যেকোন সমস্যা হলে কেনার ১৫ দিনের মধ্যে পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ভিভো কোম্পানির বরিশালে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিক্রেতা কেউ গ্যারান্টির শর্ত পূরণ করেননি। এমনকি সেটটির ত্রুটির সমাধানও করেনি। তাছাড়া ভিভো মোবাইল সেট কোম্পানির বরিশালের উপ-মহাব্যবস্থাপক রুহুল আমিনকেও বিষয়টি জানালে তিনিও কোন সমাধান দেননি। তাই ক্রেতা হিসেবে ন্যায় বিচার পাওয়ার লক্ষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান মাসুদ হাওলাদার। প্রয়োজনে তিনি এ বিষয় আদালতের দ্বারস্থও হবেন বলে জানান।
এদিকে অভিযুক্ত স্মার্টফোন সেন্টারের স্বত্তাধিকারী আল-আমিন ও সেখানে কর্মরত ভিভো মোবাইল সেট কোম্পানির কর্মচারী সাব্বির মোবাইল সেটের ত্রুটির কথা স্বীকার করে বলেন, তারাও ক্রেতা মাসুদ হাওলাদারের সাথে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়েছিলেন। কিন্তু একাধিকবার সমাধানের চেষ্টার পরও তার মোবাইল সেটটিতে সমস্যা রয়ে যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ শাহ শোয়াইব মিয়া জানান, তিনি একটি অভিযোগ পেয়েছেন। ভিভো মোবাইল সেট কোম্পানি গ্যারান্টির শর্তানুযায়ী ভোক্তাকে সকল সুবিধা দিতে বাধ্য। এ্যাডভোকেট মাসুদ হাওলাদারের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার ক্ষুণ্ন হয়ে থাকলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
আর সেলক্ষে এরইমধ্যে অভিযোগের শুনানির জন্য উভয়পক্ষকে নোটিস প্রদান করা হয়েছে। নোটিসে সোমবার (১১ এপ্রিল) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ে শুনানীর জন্য থাকতে বলা হয়েছে।’