বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় অনেকেই বিদ্রুপ করেছেন, অথচ এখন এই ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় আইটি/হাইটেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিয়েছি। কেরানীগঞ্জে হাইটেক পার্ক স্থাপন সম্পন্ন হলে এই এলাকার ছেলেরা গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবর্তে অনলাইনে কাজ করে ডলার উপার্জন করতে পারবে যা এই দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
এসময় মান্যবর ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ও আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে আইসিটি সেক্টরে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশের ১২টি জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পে ভারত সরকার ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার (বিডিসেট) নামীয় আরেকটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৬টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্ক এবং শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হবে। এখান থেকে আগামী দুই বছরে ২৪০০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। ইন্টারনেট অব থিংস, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এক্সটেনডেড রিয়ালিটিসহ অন্যান্য উচ্চতর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়াও মাস্টার ট্রেইনার তৈরির লক্ষ্যে ৩০ জনকে ৬ মাসের জন্য ভারতে আইসিটির ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে আইসিটি খাতে যথাযথ অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার ৫০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। গ্রাম পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। এখন ডলার উপার্জনের জন্য কেরানীগঞ্জবাসীকে ইউরোপ-আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হবে না। কেরানীগঞ্জের মাটিতে বসেই ইউরোপ-আমেরিকার কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পাবে। এটাই হলো শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, দুই দেশের উন্নত সম্পর্ক আরও দৃঢ়করণ এবং আইসিটি সেক্টরসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারীত্ব বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে আইসিটি সেক্টরে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশের ১২টি জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পে ভারত সরকার ঋণ দিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারত বাংলাদেশে তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করবে বলে আমরা আশাবাদী।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, এখন পর্যন্ত হাইটেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো – ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে ৩৬০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। বিভিন্ন আইটি/হাইটেক পার্কে প্রায় ২২০০০ জনের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ টি জেলায়) প্রকল্পের আওতায় ১০,০০০ তরুণ তরুণীকে ইমার্জিং টেকনোলজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় জাপান থেকে ৫০ জনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ১০০ জন প্রশিক্ষণার্থীর প্রশিক্ষণ দ্রুত শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য স্থাপনাসমূহের মধ্যে রয়েছে ৮টি জেলায় ৭ তলা এবং ৪টি জেলায় ৫ তলা বিশিষ্ট মাল্টিটেনেন্ট ভবন নির্মাণ (স্টিল স্ট্রাকচার), ৩টি জেলায় ৩ তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি ভবন (আরসিসি স্ট্রাকচার) নির্মাণ এবং ৬টি জেলায় আধুনিক সিনেপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ এবং ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তরুণ ও উদ্যমী ফিল্যান্সারদের মাঝে বিনামূল্যে ল্যাপটপ দেওয়া হয়।