দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে জানান দিল কনটেন্ট শেয়ারিং ও মেসেজিং প্লাটফর্ম স্ন্যাপ। এবার ফেসবুককে টেক্কা দিতে বেশকিছু ফিচার নিয়ে হাজির হয়েছেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইভান স্পিগাল। এর মধ্যে থাকছে নতুন ক্যামেরা ফিচার, গেমিং প্লাটফর্ম, নতুন ডেভেলপার টুল এবং আরো কিছু। খবর ম্যাশেবল।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানির প্রতিষ্ঠা এবং ২০১২ সালের মে মাসে সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিলেও স্পিগাল প্রথম জনসমক্ষে আসেন ২০১৭ সালে। এরপর গণমাধ্যমে আর তেমন কথা বলেননি তিনি। অর্থাৎ স্ন্যাপ বরাবরই কোম্পানির গোপনীয়তা রক্ষা করে গেছে। অবশেষে চলতি সপ্তাহে কোম্পানির ইতিহাসে বৃহত্তম উন্মুক্ত আয়োজন করা হয়। অংশীদারদের নিয়ে দিনব্যাপী এ ‘পার্টনার সামিটে’ কোম্পানির বড় পরিকল্পনার ঘোষণা আসে।
ফেসবুকের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রধান দুটি কৌশলের ইঙ্গিত দিয়েছে স্ন্যাপ। কৌশল দুটি হলো—অ্যাপে ব্যবহারকারীদের বেশি সময় ধরে রাখা এবং টিন্ডার ও হাউজপার্টির মতো কনটেন্ট শেয়ারিং অ্যাপের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্ন্যাপের উপস্থিতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটানো। এছাড়া বহু প্রতীক্ষার পর স্ন্যাপ নতুন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক উন্মোচন করেছে।
এ ধরনের পরিকল্পনাকে বেশ সাহসী বলেই বর্ণনা করছেন প্রযুক্তিবিদরা। যদিও এতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর পরিষ্কার কোনো সম্ভাবনা নেই এবং স্ন্যাপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
যদিও স্ন্যাপচ্যাটে নতুন গ্রাহক যুক্ত করার প্রক্রিয়া নতুনভাবে শুরু হয়েছে। তাছাড়া বিশেষ করে তরুণদের ধরে রাখতে এবং তাদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করতে স্ন্যাপ উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।
নতুন পদক্ষেপের মধ্যে কিশোর বয়সীদের দিকে আরো বেশি নজর দিচ্ছে স্ন্যাপ। কিশোরদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে এবং বেশি সময় ধরে রাখতে ‘টু সাইডস’-এর মতো ফিচার এবং নতুন গেমিং প্লাটফর্মের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে কোম্পানি।
ক্যামেরা ফিচারেও কিছু আপডেট এসেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো অ্যাপের মধ্যেই বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা।
এসব ফিচারের মাধ্যমে কিশোর ও তরুণদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ১৩-৩৪ বছর বয়সীদের ৭৫ শতাংশ এবং ১৩-২৪ বছর বয়সীদের ৯০ শতাংশকেই এ প্লাটফর্মে আনা সম্ভব হয়েছে। সিইও স্পিগালের দাবি, এ হার ফেসবুক অথবা ইনস্টাগ্রামের চেয়ে ঢের বেশি।
অ্যাপের বাইরে এতদিন স্ন্যাপের উপস্থিতি ছিল না। কোম্পানির প্রবৃদ্ধির পথে এটিকে বড় বাধা মনে করা হতো। এবার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অন্যান্য স্থানেও স্ন্যাপকে পাওয়া যাবে। এর ফলে স্ন্যাপচ্যাটের ব্যবহারকারীরা অ্যাপের ‘স্টোরিজ’ ফিচার থেকে টিন্ডার বা হাউজপার্টির মতো প্লাটফর্মে কনটেন্ট শেয়ার করতে পারবেন।
ইনস্টাগ্রামেও স্ন্যাপচ্যাটের ‘স্টোরিজ’-এর মতো একটি ফিচার আছে। কিন্তু স্ন্যাপচ্যাটের অত্যন্ত জনপ্রিয় এ ফিচারে এখন ক্রস প্লাটফর্ম সুবিধা যুক্ত হওয়ায় আরো বেশি ব্যবহারকারী যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।
সবশেষে স্ন্যাপের বিজনেস ফিচার ‘স্ন্যাপ অডিয়েন্স নেটওয়ার্ক’ কোম্পানির ব্যবসায় বড় ধরনের অবদান রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে স্ন্যাপের বিজ্ঞাপনদাতারা অন্যান্য অ্যাপেও বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ পাবেন। ফেসবুকের একই ধরনের ফিচার রয়েছে। স্ন্যাপের এ ফিচার ঠিক কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে ফিচারটি যে কোম্পানির রাজস্ব আয় বহুলাংশে বাড়াবে, তাতে সন্দেহ নেই।