২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট খাতের গ্রাহক স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতের ব্যকবোন হিসেবে ইন্টারনেট এর ওপর কর আরোপ এবং বিদেশে থেকে মোবাইল ও ল্যাপটপ আমদানীতে রিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন,‘বাজেট পর্যালোচনা করলে বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করলেও বাস্তবতা ভিন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে একথা গ্যারান্টি সহকারে বলা যায়’।
এমন ক্ষবদ্ধতার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার ১৩ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠীর হাতেও ডিজিটাল ডিভাইস, দ্রুতগতির নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনের সিম এর ব্যবহার দিয়ে প্রকৃত তথ্য তুলে আনা সম্ভব না। মূলত ফেসবুক ব্যবহারকারী ও মোবাইল ব্যাংকিং এর সক্রিয় ব্যবহারকারী হিসাব করলে দেখা যাবে ইন্টারনেট বা প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম মাত্র ৫ থেকে ৬ কোটি জনগণ। আবার এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে সাধারণ জনগণের ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ১০ ভাগ। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ডিভাইস অর্থাৎ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাব এর মূল্য কমিয়ে মানসম্পন্ন ডিভাইস শিক্ষার্থী এবং সাধারন মানুষদের মাঝে সরবরাহ করা। কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর বৃদ্ধির ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।’
দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার সুবিধা দিলেও এর সুফল দেশের জনগণ খুব একটা ভোগ করে না বলেও দাবি করেছেন এই নেতা। দাবির ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, এ প্রধানতম কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোয়ালিটি অফ সার্ভিস থেকে বাদ পড়া ডিভাইসগুলি দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করা হয় এবং মূল্য একেবারে যে কম সে কথা বলা যাবে না। এর পাশাপাশি ব্যাটারি চার্জার সহ অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের ক্ষেত্রে ও কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নেটওয়ার্ক। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ৪০ লক্ষ বলা হলেও মূলত এর ৯০% ই সরকারি-বেসরকারি রাষ্ট্রীয় বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ সেবার গ্রাহক । বাসাবাড়ি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার গত এক বছর যাবত সবেমাত্র বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে এমন সময় এই সেবার ওপর অর্থাৎ প্রকারান্তরে আইএসপি অপারেটরদের উপর যে ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে তার সাথে গ্রাহক পর্যায়ে চলমান ১৫ শতাংশ কর যুক্ত হলে এসেবা দিতে গিয়ে ক্ষুদ্র আইএসপি অপারেটরগুলো যেমন বিলীন হয়ে যাবে তেমনি প্রান্তিক পর্যায়ে এ সেরা নিতে জনগণকে হিমশিম খেতে হবে অন্যথায় এ সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হবে’।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মুঠোফোন সেবার উপর গ্রাহক লেভেলে ২১.৭৫ শতাংশ করের সাথে অন্যান্য (অপারেটরদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ+কর্পোরেট+রাজস্ব ভাগাভাগির+তরঙ্গের উপর কর+বিনিয়োগের উপর )সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭ শতাংশ কর গ্রাহক কে দিতে হচ্ছে। বর্তমানে ভয়েস কল ও এসএমএস কমে যাওয়ার ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২শত কোটি টাকা। আমরা ধরে নিয়েছিলাম এ ক্ষতি পোষাতে হয়তো চলতি অর্থবছরে এ খাতে কর কমানো হবে, কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত দুঃখজনক কমানো হয়নি নতুন অপারেটর ও বিনিয়োগকারীদের এ খাতে উৎসাহ দিতে বিশেষ সুবিধাও প্রদান করা হয়নি। ফাইভ-জি চালু হয়েছে অথচ এ সেবার সিম ট্যাক্স ,আইওটি ডিভাইস এ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবে কর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই। সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা করতে চায় অথচ প্রযুক্তিপণ্যের উপর নতুন করে কর আরোপ করা হয়েছে। উল্টো ফাইবার আমদানির ক্ষেত্রে ও ১০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করেছে।