স্টিভ জবস ছিলেন অ্যাপলের তুলনাহীন এক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটিতে তার মতো একজন অদ্বিতীয় সিইও আর কখনই দেখা যাবে না। তিনি শুধু অ্যাপলের সিইও ছিলেন না, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পণ্য কর্মকতাও ছিলেন। অ্যাপলের বর্তমান সিইও টিম কুক কখনো সেই দায়িত্ব নিতে পারবেন না। তবে সিইও হিসেবে এটা তার কোনো ঘাটতি নয়। কারণ ওই দায়িত্ব নেয়ার প্রয়োজনীয়তাই নেই টিম কুকের।
বিশ্লেষক হোরাস দেদিউর মতে, অনেকের ধারণা ছিল পণ্যসংশ্লিষ্ট নয় বলে অ্যাপলের সিইও হিসেবে ব্যর্থ হবেন টিম কুক। বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি। অনেকেই অনুধাবন করতে পারেন না যে অ্যাপলের মতো একটি পরিপক্ব কোম্পানির জন্য আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী। অ্যাপলের মতো কোম্পানির জন্য পণ্যের চেয়ে উৎপাদন ও পণ্য সরবরাহ যেমন দক্ষ সরবরাহ ব্যবস্থা, বণ্টন, অর্থ ব্যবস্থা এবং বিপণন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাপলের সিইও হিসেবে টিম কুক এসব ক্ষেত্রে তার মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যে কারণে অ্যাপলের সাবেক যেকোনো সিইওর চেয়ে টিম কুককেই সেরা দাবি করা হয়েছে।
হোরাস দেদিউ বলেন, আমি জানি অ্যাপলের সিইও হিসেবে স্টিভ জবসের চেয়ে টিম কুককে এগিয়ে রাখা প্রচলিত মতবিরোধী বক্তব্য বলে বিবেচিত হবে। প্রশ্ন দেখা দেবে, কীভাবে অ্যাপল সিইও হিসেবে স্টিভ জবসকে ছাড়িয়ে গেছেন টিম কুক। স্টিভ জবস অ্যাপলের জন্য দেবতুল্য ছিলেন। কাজেই তিনি অস্পৃশ্য। তার হাত ধরে অ্যাপলের যাত্রা হয়েছিল এবং সংকটপূর্ণ সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়েছিলেন। বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্প খাতে বেশকিছু অভাবনীয় উদ্ভাবন স্টিভ জবসের হাত ধরে এসেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার (দ্য অ্যাপল ২), সবার জন্য সহজে ব্যবহার উপযোগী কম্পিউটার দ্য ম্যাক; পরবর্তীতে আইপড, আইফোন, আইপ্যাডের মতো আরো অসংখ্য পণ্য স্টিভ জবসের হাত ধরে এসেছে।
হোরাস দেদিউর দাবি, স্টিভ জবস কখনই একজন প্রকৃত সিইও ছিলেন না। কারণ তিনি তার ক্যারিয়ারের দীর্ঘ একটি সময়ই প্রধান পণ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তবে অ্যাপলের সিইও কিংবা পণ্যপ্রধান, যেভাবেই বিবেচনা করা হোক, সম্পূর্ণ নিজ চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন স্টিভ জবস। অ্যাপলের কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটির সবক্ষেত্রে তার বিচরণ ছিল। অথচ একটা পর্যায় নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকেই বিতাড়িত হয়েছিলেন তিনি। সংকটপূর্ণ অবস্থায় যখন অ্যাপলে স্টিভ জবসের প্রত্যাবর্তন ঘটে, তখন তাকে নতুন রূপে আবিষ্কার করেছিল প্রযুক্তি বিশ্ব। কিন্তু তখন অ্যাপলের অবস্থা ছিল দুর্দশাগ্রস্ত। অ্যাপলকে আবার আগের অবস্থানে ফেরাতে টিম কুক এবং জনি আইভকে নিয়ে তিনি সর্বোত্কৃষ্ট উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যান। ওই সময় অ্যাপলের যুগান্তকারী কিছু পণ্য বাজারে আসে। কাজেই স্টিভ জবস দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই সিইওর ভূমিকা সম্পর্কে জানাশোনা ছিল টিম কুকের। যে কারণে স্টিভ জবস তার শারীরিক অসুস্থতার জন্য সিইওর দায়িত্ব টিম কুকের কাছে হস্তান্তর করলে অ্যাপল পরিচালনার জন্য খুব বেশি জটিলতায় পড়তে হয়নি।
টিম কুক কতটুকু উদ্ভাবনী মানসিকতার? এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। স্টিভ জবসের নেতৃত্বে অ্যাপল যেমন সৃজনশীল উদ্ভাবনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ছিল, টিম কুকের নেতৃত্বে তেমন আছে কি? স্টিভ জবসের দর্শনীয় ট্র্যাক রেকর্ড ছিল। স্টিভ জবস এখন যেমন শ্রদ্ধার পাত্র, অ্যাপলের সিইও থাকাকালীন প্রযুক্তিবিশ্বে এতটা পূজনীয় ছিলেন না। স্টিভ জবসের নেতৃত্বে বৈশ্বিক পিসি বাজারে অ্যাপলকে তীব্র সংগ্রাম করতে হয়েছে। সে সময় অনেক পণ্ডিত অ্যাপলকে তাদের সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের লাইসেন্সিং মডেল অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের পিসি নির্মাতাদের অ্যাপলের কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। স্টিভ জবস সে সময় ওই পণ্ডিতদের পরামর্শ শুনলে তা হলে অ্যাপলের মৃত্যু হতো।
স্টিভ জবসের প্রয়াণের পর টিম কুকের নেতৃত্বেও সৃজনশীল উদ্ভাবনের ধারা থেকে বিচ্যুত হয়নি অ্যাপল। সর্বশেষ আইফোন উন্মোচনের দশকপূর্তি সংস্করণ আইফোন টেনে তার প্রমাণ দিয়েছে কুকের নেতৃত্বে পরিচালিত অ্যাপল। ডিভাইসটির মাধ্যমে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তির পরিচয় করায় অ্যাপল, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। আইফোন টেনের মাধ্যমে আসা ফেস আইডি কিংবা ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি এখন সব স্মার্টফোন নির্মাতাই ব্যবহার করছে। সেলুলার সংযোগ সমর্থিত অ্যাপল ঘড়ি এরই মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে।