তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয়ের তথা কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমানে তরুণদের একটি বড় অংশ এ খাতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ১২টি বিভাগেই তাদের দক্ষতা সীমাবদ্ধ।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে এ খাতগুলো হলো কন্টেন্ট রাইটিং, ক্রিয়েটিভ আর্ট অ্যান্ড গ্রাফিকস ডিজাইন, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), মডার্ন অ্যাকাউন্টিং, মোবাইল গেম অ্যান্ড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ডাটা অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ভিজ্যুয়ালাইজেশান, ওয়েবসাইট থিম অ্যান্ড প্লাগ ইন ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং ও সিকিউরিটি।
মার্কিন বাণিজ্য সাময়িকী সিএনবিসির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ওয়েব ডেভেলপিং, ৩৫ শতাংশ গ্রাফিকস ডিজাইন, ৫ শতাংশ ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ৮ শতাংশ অন্য কাজ করে থাকেন।
দেশে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট ১২টি খাতের বাইরে থাকা বিভাগগুলোতেও অনেকেই কাজ করছেন। কিন্তু সেটি সংখ্যার তুলনায় সীমিত। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিএস) তথ্যনুযায়ী, বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে অন্তত ১ হাজার ১৯টি কাজ রয়েছে। কিন্তু সেসব কাজের প্রতি আগ্রহ ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকায় বাংলাদেশের তরুণরা ঘুরেফিরে কয়েকটি কাজেই সীমাবদ্ধ থাকছেন।
বিএফডিএসের চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান বলেন, যাদের একটি বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে বা যে বিষয়ে পড়াশোনা ছিল সেটি নিয়ে কীভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজারে কাজ করা যায় তা ভাবতে হবে। সে-সংক্রান্ত কাজ শিখতে হবে। এখানে অনেক বেশি চাহিদা সম্পন্ন কাজ না শিখে যেটি সহজে শেখা সম্ভব ও ঘণ্টা হিসেবে কাজের মূল্য বেশি সেটি শিখতে হবে। যেমন বলা যায় একজন বিবিএ পড়েছেন। তার উচিত অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড বুক কিপিং-সংক্রান্ত কাজ শেখা। তাহলে সে কম সময়ে শিখতে পারবে এবং এ কাজের চাহিদাও অনেক। যিনি যোগাযোগে পড়েছেন তার উচিত যোগাযোগ-সংক্রান্ত কাজ শেখা। তাহলে দ্রুত শেখা হবে ও কাজের মান ভালো হবে। তার পেমেন্টও বেশি হবে।
আন্তর্জাতিক আইটি প্রশিক্ষণ সংস্থা কোডার্সট্রাস্টের বাংলাদেশ বিষয়ক প্রধান মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, বর্তমানে সরকার প্রচুর ফ্রিল্যান্সার তৈরির চেষ্টা করছে। সেটি সফলতার মুখও দেখছে। তবে প্রশিক্ষক তৈরিতে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অনেক সময় বাইরের প্রশিক্ষক নিয়ে আসতে হচ্ছে, আবার বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কোর্স নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ শেখাতে পারবেন দেশে এমন প্রশিক্ষক তৈরি করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, নতুনদের ক্ষেত্রে গ্রাফিকস ডিজাইন দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তবে এখানে প্রচুর কাজের পাশাপাশি প্রতিযোগিতাও রয়েছে। একজন অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার যেখানে ১ ঘণ্টা কাজের জন্য ৫০ থেকে ১০০ ডলার বা তারও বেশি পেমেন্ট পাবেন সেখানে গ্রাফিকস ডিজাইনার পাবেন ঘণ্টায় ৫ থেকে ২০ ডলার। অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে কম বেশি হতে পারে। কিন্তু অ্যাভারেজ রেট এটা। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই দক্ষতা বাড়াতে হবে।
দেশে নারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হলে তা নারীদের কর্মসংস্থান, আয় ও ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পারিবারিক সহায়তার অভাব, ডিজিটাল ডিভাইস হাতে পেতে বিভিন্ন বাধা, সংযোগ সংক্রান্ত জটিলতা, ভাষার প্রতিবন্ধকতা এবং সময়ের অভাবের মতো সীমাবদ্ধতা অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থেকে ঝরে যেতে বাধ্য করেছে। নারীদের এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে এ খাতে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।