সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম থেকে শুরু করে কনটেন্ট তৈরির মাধ্যমে বর্তমানে তরুণদের একটি বড় অংশ অর্থ উপার্জন করছে। ফলে সন্তানদের চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের যে চিন্তাভাবনা সেটির প্রতিফলন হচ্ছে না। চাকরি বা ব্যবসা না করেই তরুণ প্রজন্ম প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছে। এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেশন জি।
জেনারেশন জি হচ্ছে মূলত ২০০০ সালে বা তার একটু আগে জন্ম নেয়া তথা বর্তমান সময়ের ২০ বছর বয়সী তরুণরা। এ বয়সীদের অধিকাংশই চাকরি বা পারিবারিক ব্যবসার বিষয়ে কম আগ্রহী। সম্প্রতি অ্যাডোবি পরিচালিত এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টকে আয়ের উৎসে পরিণত করার ব্যাপারে অধিকাংশ তরুণই আগ্রহী।
মে মাসে নয়টি দেশের নয় হাজারের বেশি ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট নির্মাতার ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৪৫ শতাংশ জেনারেশন জির কনটেন্ট নির্মাতা অনলাইনে কনটেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে আয় করতে চায় এবং নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলতে চায় বলে জানিয়েছে। অ্যাডোবির মতে, যেসব নির্মাতা অনলাইনে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে চায়, তাদের সৃজনশীল কাজ প্রকাশ করতে চায় তারাই মূলত নির্মাতা। তাদের কাজের মধ্যে ফটোগ্রাফি, গান, নন ফানজিবল টোকেন (এনএফটি) থেকে শুরু করে ভিডিও স্ট্রিমিংও রয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা জানান যে তাদের পাঁচ হাজারের বেশি অনুসরণকারী রয়েছে এবং সেখানে কনটেন্ট পোস্ট করার মাধ্যমে তারা আয় করেছে।
গত দুই বছরে বিশ্বের শ্রমবাজারে যে পরিবর্তন এসেছে সেখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে জেনারেশন জির কনটেন্ট নির্মাতা ও ইনফ্লুয়েন্সাররা। কভিড-১৯ মহামারীর সময় যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীদের মধ্যে ব্যবসা শুরুর চল দেখা দেয়। সেনসাস ডাটার তথ্যানুযায়ী, গত বছর দেশটিতে রেকর্ড ৫৪ লাখ নতুন ব্যবসা শুরু হয়েছে।
ড. পারডু বলেন, তরুণ কর্মীদের মধ্যে আমরা এ প্রবণতা বেশি দেখতে পেয়েছি। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে যখন শ্রমবাজারে সংকট তৈরি হয় তখন কর্মীরা তাদের বেতন-ভাতায় কোনো উন্নতি না দেখতে পেয়ে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নেয়। অন্যদিকে কীভাবে সহজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ তৈরি করা যায় সে বিষয়ে ডিউক ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ও ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোর্স চালু করেছে, যা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
অ্যাডোবির তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নির্মাতা তাদের কনটেন্ট মনিটাইজ করে তাদের প্রতি ঘণ্টায় গড় আয় ৬১ ডলার। প্রতি সপ্তাহে এর পরিমাণ ৪০ ডলার হলে বার্ষিক আয় ১ লাখ ২২ হাজার ডলারে পৌঁছাবে। তবে অ্যাডোবির জরিপে যারা অংশ নিয়েছে তারা কেউই পূর্ণকালীন সময় দেয় না। কনটেন্ট নির্মাতারা প্রতি সপ্তাহে ৯ ঘণ্টা এবং ইনফ্লুয়েন্সাররা ১৫ ঘণ্টা সময় কনটেন্ট তৈরিতে ব্যয় করে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ছয়জন কনটেন্ট নির্মাতা পূর্ণকালীন চাকরি করে বলেও অ্যাডোবি জানতে পেরেছে। সাধারণের ধারণা, কনটেন্ট নির্মাতা ও ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে যাদের ১০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে তারা ভালো আয় করছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন বলে জানিয়েছেন আমেরিকান ইনফ্লুয়েন্সার কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা কিয়ানা স্মিথ ব্রুনেটিয়া। লিংক শেয়ারিং প্লাটফর্ম লিংকট্রি এপ্রিলে সাড়ে নয় হাজারের বেশি কনটেন্ট নির্মাতাকে নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, পূর্ণকালীন কনটেন্ট নির্মাতাদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ বছরে ৫০ হাজার ডলার আয় করতে পারে। কিছু কনটেন্ট নির্মাতা ও ইনফ্লুয়েন্সার সফলতার মুখ দেখলেও নতুন কারো জন্য প্লাটফর্মে অবস্থান তৈরি করতে হলে অগণিত সময় ব্যয় করতে হবে।