বাংলাদেশ সরকারের এটুআই-এর দু’টি উদ্যোগকে এবছর বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলোর জোট-ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স (ডব্লিউআইটিএসএ) কর্তৃক প্রদানকৃত উইটসা ২০২২ গ্লোবাল ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী ডব্লিউসিআইটি ২০২২ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বুধবার রাতে বিশ্বের ১৬৫টি প্রকল্পের মধ্যে থেকে এটুআই-এর ‘ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্ক’ উদ্যোগকে চেয়ারম্যান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এটু্আই-এর আরো একটি প্রকল্প ‘কোভিড-১৯ ন্যাশনাল ড্যাশবোর্ড’- ইনোভেটিভ ই-হেলথ সল্যিউশনস অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে ১ম স্থান অর্জন করে। ডব্লিউআইটিএসএ চেয়ারম্যান ইয়ানিস সিরোস গতকাল উইটসা গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড নাইট অনুষ্ঠানে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর-এর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
সরকারি ও বেসরকারি/এনজিও খাতের জন্য মোট ১৪ ক্যাটাগরি ছাড়াও এবছর নতুন ক্যাটাগরি হিসেবে চেয়ারম্যান অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারি সকল দপ্তরের তথ্য ও সেবা একক প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রদানের স্বীকৃতি হিসেবে চেয়ারম্যান ক্যাটাগরিতে ‘ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্ক’ এবং কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় প্রযুক্তির সাহায্যে ডাটাভিত্তিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নাগরিকদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের স্বীকৃতি হিসেবে ইনোভেটিভ ই-হেলথ ক্যাটাগরিতে ‘কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ড’ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই সম্মাননা অর্জন করে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স (ডব্লিউআইটিএসএ) এর সদস্য হলো বিশ্বের ৮০টি দেশের জাতীয় পর্যায়ের বাণিজ্য সংগঠন। প্রতিবছর সদস্য দেশসমূহের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা এ পুরস্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। ডব্লিউআইটিএসএ-র সদস্যরা বিশ্বের প্রায় ৯০% আইসিটির বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। ডব্লিউআইটিএসএ কর্তৃক আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অলিম্পিক খ্যাত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি (ডব্লিউসিআইটি-২০২২) শীর্ষক সম্মেলন উপলক্ষ্যে এবছর ১৩-১৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে এর সদস্যভূক্ত দেশের ৪০০+ প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।
উল্লেখ্য, জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারি সকল দপ্তরের তথ্য ও সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রদানের লক্ষ্যে ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করছে এটুআই। দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়সহ ৫১,৫০০+ অধিক সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইটের সমন্বয়ে তৈরি করা বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (www.bangladesh.gov.bd) বিশ্বের বৃহত্তম সরকারি ওয়েব পোর্টাল। যা বাংলাদেশ সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে। এপর্যন্ত এতে সরকারি দপ্তরের ৮১৩টি ই-সেবা সংযুক্ত করা হয়েছে, যেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪ লক্ষেরও অধিক জনগণ তথ্য ও সেবা গ্রহণ করছেন। ন্যাশনাল পোর্টাল ফ্রেমওয়ার্কের কারণে জনসেবা প্রদানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন দায়বদ্ধতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে, একইসাথে অতীতের তুলনায় সরকারি দপ্তরের উপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর জরুরি অবস্থায় মহামারি কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকানো এবং এর প্রভাব মোকাবেলায় সময়মতো কোভিড সম্পর্কিত সঠিক তথ্য ও ডাটা সরবরাহের জন্য ‘কোভিড-১৯ জাতীয় ড্যাশবোর্ড’ তৈরি করেছে এটুআই। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ এবং ইউএনডিপিসহ একাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও ডাটা থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে করোনাভাইরাসের বিস্তারের ধরন, কোভিড আক্রান্ত সম্ভাব্য রোগীদের শনাক্তকরণে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সঠিক উদ্ভাবনী সমাধান তৈরিতে ডাটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়েছে।
উইটসা অ্যাওয়ার্ড নাইটে ‘উইটসার চেয়ারম্যান অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘ইনোভেটিভ ইহেলথ সল্যিউশনস অ্যাওয়ার্ড’ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা অর্জন করায় এটুআইকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। অনুষ্ঠান মঞ্চে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দ্য ন্যাশনাল টেক অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়েশিয়া (পিকম) এর চেয়ারম্যান ড. সিন সিয়াহ, পেনাং স্টেট এক্সকো ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ ইকোনমি এর সভাপতি ইয়েউহ সুন হিন, উইটসার রিজিওনাল ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিসিএস সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্যপ্রযুক্তিখাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।