বর্তমানের ডিজিটাল যুগে জনপ্রিয় হচ্ছে অপ্রথাগত আয়ের উৎস। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও তৈরির মাধ্যমে আয় করা। দেশের অনেক তরুণ এখন ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও বানানোর মাধ্যমে আয় করছেন বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ। এমনই দুইজন হলেন সাকিব আবদুল্লাহ এবং মো. মাসুদুল আলম। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা শেষে তারা পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটিং। ‘৫ মিনিটে জেনে নিন’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে তারা প্রতিমাসে গড়ে ২৪টি ভিডিও আপলোড করছেন। আর এতেই মাস শেষে তাদের ব্যাংকে ঢুকছে লাখ টাকার বেশি! এক বছরের সামান্য বেশি সময় আগে যাত্রা শুরু করা এই পেজের ভিডিওগুলো এডিট করেন মো. মাসুদুল আলম, স্ক্রিপ্ট লেখা ও ভয়েস দেন সাকিব আবদুল্লাহ।
‘৫ মিনিটে জেনে নিন’ এই পেজে বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়। কনটেন্ট বানানোর জন্য এই বিষয়টিই কেন বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, আমি আগে সাংবাদিকতা করতাম। আন্তর্জাতিক ডেস্কের দয়িত্ব ছিল, তখন সারাদিনই বিশ্বের নানা খবরের মধ্যে থাকতাম। ওসব নিউজ লিখতে লিখতেই মনে হয়, এগুলো নিয়ে তো বিশ্লেষণমূলক ভিডিও বানানো যেতে পারে। ব্যস! আইডিয়াটা নিয়ে আলোচনা করলাম বন্ধু মাসুদের সঙ্গে। ও রাজি হয়ে গেলো। তারপর আমরা শুরু করে দিলাম।
সাকিব আরও বলেন, শুরুর সময়টাই সবচেয়ে কঠিন ছিল। ভিডিও আপ দিই, পরিচিত মানুষ ছাড়া কেউ দেখে না। একটা ভিডিওতে দেখা যায় ২০-৩০টা ভিউ আসে। তবে আমরা হতাশ হইনি। কাজ চালিয়ে গেছি। মনিটাইজেশন পাওয়ার পর প্রথম মাসে আয় ছিল মাত্র তিন ডলার। ভেবেছিলাম মনিটাইজেশন পেলেই বোধহয় আয় অনেক হবে। বাস্তবে দেখা গেলো, বিষয়টা আলাদা। আমরা আমাদের দর্শকদের নিয়ে ভেবেছি, আমাদের কাজ নিয়ে ভেবেছি। তারপর চেষ্টা করতে করতে একটা ফরম্যাটে স্থির হয়েছি। যখন একটা ডিসেন্ট ইনকাম আসতে শুরু করলো, তখনই আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। তখন থেকে আমরা প্রোডাকশন বাড়িয়েছি। এখন শুক্রবার বাদে সপ্তাহের অন্যান্য দিন কমপক্ষে একটি করে ভিডিও দিচ্ছি আমরা।
মাসুদ বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনোই চাকরির প্রতি আকর্ষণ বোধ করিনি। সাকিব যখন প্রস্তাবটা দিলো তখন সদ্য মাস্টার্স শেষ হয়েছে আমার। মনে হলো নিজের একটা কিছু দাঁড় করাতে পারলে ভালো। সেই কথা ভেবেই কাজ শুরু করি। যেহেতু সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছি তাই বিশ্লেষণ ধরনের বিষয়ে আমারও আগ্রহ ছিল। সব মিলিয়ে ব্যাটেবলে মিলে গেছে। তবে ‘৫ মিনিটে জেনে নিন’ পেজের শুরুর সময়টাতে অনেক কষ্ট করেছেন তারা। সাফল্যের দেখা পেতে একটানা শ্রম দিতে হয়েছে প্রায় ৪ মাস। চার মাস ধরে প্রতি সপ্তাহে দুটো করে ভিডিও আপলোড দিতেন সাকিব-মাসুদ। তারপর পান মনিটাইজেশনের দেখা।
মাসুদ আরও বলেন, কনটেন্ট থেকে আয় করা যতটা সহজ বলে মনে হয় আসলে অতটা সহজ না। প্রথমদিকে আমরা অনেক কিছুই বুঝিনি। একটা জিনিস চেষ্টা করেছি, দেখা গেলো সেটা ফেইল করেছে। তারপর আরেকভাবে চেষ্টা করেছি। ট্রায়াল এন্ড এরর মেথড আরকি। করতে করতে হতাশ লাগত প্রায়ই। তবুও একটানা ৪-৫টা ভিডিও ফ্লপ যাওয়ার পর যখন একটাতে কিছু ভিউ আসত, তখন সেটা দেখে আবার উৎসাহ পেতাম। তারপর একসময় মনিটাইজেশন পেয়ে গেলাম। নিজে নিজেই ভিডিও এডিটিং শিখেছি। তবে এতে বেশ সহায়তা করেছে ইউটিউব। আমরা ধীরে ধীরে একটা কনটেন্ট প্রোডিউসিং কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই। ইতিমধ্যে আমরা আরও একটা পেজ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এভাবেই আস্তে আস্তে আমরা সামনে এগোতে চাই। হয়তো আর বছরখানেক পর আমরা ৫-১০ জনের জন্য কর্মসংস্থানও তৈরি করতে পারব।