আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আয়োজিত হবে আইসিটি খাতের বৃহৎ আয়োজন “ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২”। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সক্ষমতা জানান দিতে এই আয়োজন আগামী ৮-১১ ডিসেম্বর ২০২২ ঢাকার আগারগাঁও শেরে-বাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)-তে অনুষ্ঠিত হবে। এরই আলোকে ২৬ অক্টোবর ২০২২ বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকার বনানীতে অবস্থিত “শেরাটন ঢাকা” হোটেলে “অ্যাম্বাসেডর নাইট” আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে মূল আয়োজক সংস্থা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর মাধ্যমে মেড ইন বাংলাদেশ থেকে আইসিটি পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চায় সরকার।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২ আয়োজন সম্পর্কে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে জানাতে এবং বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণের উদ্যোগ হিসেবে এই অ্যাম্বাসেডর নাইট আয়োজন করা হয়। এতে সৌদি আরব, মালদ্বীপ, মরক্কো, ব্রুনাই, তুর্কি, দুবাই, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং ভুটান সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। তিনি বলেন, প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২ হবে অনন্য একটি সুযোগ। আমরা আশা করি প্রযুক্তি খাতে আমাদের সক্ষমতা এবং ভবিষ্যত সুযোগ সম্পর্কে এই আয়োজন আমাদের ধারণা দেবে। আমাদের মানুষেরা প্রমাণ দিয়েছে যে, তারা কতটা দক্ষ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং আইসিটি উপদেষ্টার পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পরিষ্কার লক্ষ্যমাত্রা ছিল আমাদের। আজ যে বাংলাদেশ আপনারা দেখছেন, সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলাফল। আপনারা যদি কোন স্বপ্ন দেখেন, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারি; শুধু কাগজে কলমে না বরং বাস্তবেও।
আইসিটি খাতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে পররাষ্ট্র নীতি দিয়ে গেছেন “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারোও সাথে বৈরিতা নয়” আমরা সেটি অনুসরণ করে যাচ্ছি। সেই যাত্রায় আমরা আপনাদের সকলকে আমাদের পাশে চাই। সবশেষে নিজ বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি বলেন, ২০১১ সাল থেকে এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আমরা আয়োজন করে যাচ্ছি। আমরা এই অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দদের, গবেষকদের এবং বিনিয়োগকারীদের অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই তারা আমাদের বাজার পরিদর্শন করুন, আমাদের সক্ষমতা দেখুক। আমরা ডিজিটাল খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে অংশীদার হয়ে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই।
এসময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ বা আইসিটি মন্ত্রীদের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এ অংশ নিতে স্ব স্ব রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।
পলক আরো বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত আইসিটি খাতে দুই মিলিয়নের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছি। প্রায় ১.৫ বিলিয়ন আইসিটি খাতে রপ্তানি বাবদ আয় হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ কর্মসংস্থান তিন মিলিয়নে এবং আইসিটি রপ্তানি পাঁচ বিলিয়ন এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমরা প্রায় দুই হাজার সরকারি সেবা এখন ডিজিটাল মাধ্যমে নিয়ে এসেছি। দেশে বিক্রিত মোবাইলের ৮০ ভাগ এখন দেশেই তৈরি হয়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার এর সভাপতিত্বে উক্ত আয়োজনে সবাইকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল কবির। এরপর অনুষ্ঠানের নানা দিক তুলে ধরেন স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাক্কো এর অর্থ সম্পাদক আমিনুল হক, বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ও বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ ছাড়াও রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২ আয়োজনে বিশেষ আয়োজন হিসেবে থাকছে স্টার্টআপ সামিট, মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, বিপিও সামিট, ই-গভার্নেন্স এক্সপো, ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো, মোবাইল অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো, সফ্টওয়্যার শোকেসিং, ই-কমার্স এক্সপো এবং কনসার্ট। এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর প্রতিপাদ্য বিষয় হল “Be Innovative & Smart” ।