পেটেন্ট ও রয়্যালটি নিয়ে অ্যাপলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিবাদ মিটিয়েই ফোন চিপের বাজারে স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে কোয়ালকম। এ দুই মার্কিন জায়ান্ট সমঝোতার মাধ্যমে আইনি ঝামেলা মিটিয়ে নেয়ার পর পরই কোয়ালকমের বাজারমূল্য ৩ হাজার কোটি ডলার বেড়ে গেছে। সেসঙ্গে ফাইভজি চিপের বাজারে কোয়ালকমের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং চীনা জায়ান্ট হুয়াওয়ের সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতার পথও সুগম হলো বলে মনে করছেন অনেকে। খবর রয়টার্স।
গত মঙ্গলবার অ্যাপলের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে নেয়ার ঘোষণার পর পরই কোয়ালকমের শেয়ারদর ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। পরের দিন বেড়েছে ১৭ শতাংশ। দুই দশকের মধ্যে এমন মূল্যবৃদ্ধির দেখা পায়নি এ মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি।
ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকরাও অ্যাপল-কোয়ালকম সমঝোতার পর পরই কোয়ালকমের শেয়ারদর বৃদ্ধির ব্যাপারে নানা মন্তব্য করতে শুরু করেন। কমপক্ষে তিনটি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের রেটিং বাড়ায় এবং টার্গেট মূল্য নয়বার বৃদ্ধি করে। পুঁজিবাজার পর্যবেক্ষক ২৫টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে ১৪টিই কোয়ালকমের শেয়ার কেনার সুপারিশ করে এবং বাকিরা ধরে রাখার পরামর্শ দেয়। বন্ডে বিনিয়োগকারীরাও ব্রোকারেজের সঙ্গে যোগ দেয়।
পুঁজিবাজারে এ আশাবাদের কিছু কারণ উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা। যেমন এমন একটা সময় এ সমঝোতা হলো, যখন সম্ভাবনাময় ফাইভজি প্রযুক্তি বাজারে এসে গেছে। ফলে ২০১০-এর দশকে কোয়ালকম যেভাবে ফোরজির বাজারে একাধিপত্য করেছিল, একইভাবে ফাইভজির বাজারেও দ্রুতই প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে এ সমঝোতাকে ‘গেম চেঞ্জিং’ বলে বর্ণনা করেছেন ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভিস।
কোয়ালকমের জন্য আরো বড় সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে আরেক মার্কিন চিপ নির্মাতা ইন্টেল। গত বছর পর্যন্ত অ্যাপলের প্রধান চিপ সরবরাহকারী ছিল তারা। কোয়ালকমের সঙ্গে অ্যাপলের সমঝোতার পর ইন্টেল মডেম চিপ ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে শুধু ইন্টেলের বার্ষিক ২০০ কোটি ডলারের বাজার অংশীদারিত্ব পেয়ে যাবে কোয়ালকম।
অ্যাপলের মতো হুয়াওয়ের সঙ্গেও মডেমের পেটেন্ট ও রয়্যালটি নিয়ে বিরোধ আছে কোয়ালকমের। বিশ্লেষকদের হিসাবে, বিবাদ চলাকালীন রয়্যালটি বাবদ অ্যাপলের কাছে কোয়ালকমের পাওনা রয়েছে ৫০০ কোটি ডলার। হুয়াওয়েও একইভাবে রয়্যালটি আটকে রেখেছে।
এখন হুয়াওয়ের সঙ্গেও সমঝোতা সেরে ফেলতে পারলে কোয়ালকম যেমন এ রয়্যালটি আদায় করতে পারবে, তেমনি আইনি লড়াইয়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ও অনেকখানি কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি ফাইভজি মডেমে পূর্ণ মনোযোগ দেয়ারও সুযোগ পাবে।
তবে এ সমঝোতার ফলে অ্যাপলও লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে ফাইভজি ফোন সরবরাহের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরীয় প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং ইলেকট্রনিকস এবং চীনা হুয়াওয়ের সঙ্গে পার্থক্য অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারবে অ্যাপল।