যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি আইন পাস হলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোকে ফেসবুক থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান মেটা। এদিকে একই ধরনের আইন করতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। খবর বিবিসি ও হিন্দুস্তান টাইমস।
নতুন এ আইন সংবাদমাধ্যমগুলোকে ফেসবুকে শেয়ার করা বিষয়বস্তুর জন্য ফী নিয়ে আলোচনার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে৷ এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় এই ধরনের আইস পাস হলে অল্প সময়ের জন্য ফেসবুক সংবাদ প্রকাশ স্থগিত করে।
মেটা দাবি করছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উঠতি সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাফিক বৃদ্ধি করে। তারা নিজেদের খবর শেয়ার করে উপকৃত হয়।
জার্নালিজম কম্পিটিশন অ্যান্ড প্রিজারভেশন অ্যাক্ট (জেসিপিএ) নামে পরিচিত আইনটি মিনেসোটা সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার কংগ্রেসে উত্থাপন করেছেন এবং সেখানে দুই দলের নেতাদের সমর্থন পেয়েছে।
সাধারণত মিডিয়াগুলো বলে থাকে, মেটা তাদের প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা সংবাদ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। বিশেষ করে মহামারীর সময় আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমগুলো যখন টিকে থাকার লড়াই করছিল, তখন মেটা প্রচুর লাভ করেছে। তবে মেটা বিষয়টিকে ভুল দাবি করেছে। বরং তারা সংবাদ উত্সগুলোতে ট্রাফিক দিয়ে থাকে।
মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেছেন, যদি কংগ্রেস জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অংশ হিসেবে সাংবাদিকতা বিল পাস করে, তাহলে আমরা প্ল্যাটফর্ম থেকে সম্পূর্ণভাবে সংবাদ মুছে ফেলার কথা বিবেচনা করতে বাধ্য হবো।
মেটা আরো জানায়, ফেসবুক অ্যাকাউন্টে খবর শেয়ার করা প্রতিষ্ঠানটির আয়ের একটি অংশ মাত্র।
মার্কিন আইনটি বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য মোকাবেলার লক্ষ্যে তৈরি একটি বৃহত্তর আইনি প্রক্রিয়ার অংশ। জেসিপিএর সমর্থকরা বলছেন, আইনটি পাস না হলে সোশ্যাল মিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডি ফ্যাক্টো আঞ্চলিক সংবাদপত্র’ হয়ে উঠবে।
চলতি বছরের এপ্রিলে অনেকটা একই ধাঁচের আইন ঘোষণা করেছিল কানাডা সরকার। তারা জানায়, একটি বিল প্রণয়ন করা হবে। তার মাধ্যমে প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে স্থানীয় সংবাদ প্রকাশকদের কনটেন্টর জন্য টাকা দিতে বাধ্য করা হবে।
গত বছরের মার্চে একই ধরনের আইন কার্যকর হলে অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুক নিউজফিডগুলো অল্প সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়। তখন মেটার একজন মুখপাত্র বলেছেন, ফেসবুকের জন্য সংবাদ থেকে ব্যবসায়িক লাভ ন্যূনতম। ব্যবহারকারীরা যে কনটেন্ট দেখে সেখানে সংবাদের পরিমাণ ৪ শতাংশেরও কম।
অবশ্য অস্ট্রেলিয়ায় গুগল ও মেটাকে তাদের প্ল্যাটফর্মে সংবাদ কনটেন্ট ব্যবহারের জন্য জন্য মিডিয়া আউটলেটের জন্য চুক্তি করতে বাধ্য করা হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে কনটেন্ট পেতে গুগল ও মেটা ৩০টিরও বেশি চুক্তি করেছে।
এ দিকে নিউজিল্যান্ডেও একই পরিস্থিতিতে পড়েছে মেটা। দেশটির সম্প্রচার মন্ত্রী উইলি জ্যাকসন বলেন, গুগল ও মেটার মতো বড় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বিনামূল্যেই স্থানীয় সংবাদ হোস্ট করে, শেয়ার করে। এটি মোটেও নায্য নয়। একটি সংবাদ কনটেন্ট তৈরির পেছনে খরচ হয়। তাদের এর দাম দেওয়াটাই নায্য।
ডিজিটাল মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমগুলো পোস্ট, ভিডিও ও লিঙ্ক শেয়ারের মাধ্যমে অর্জিত আয়ের খুবই সামান্য ভাগ পায়। বিশেষত ছোট সংবাদমাধ্যম সেভাবে আয়ই করতে পারে না। এই বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছে। নিউজিল্যান্ডের সরকার বলছে, গুগল ও ফেসবুকের থেকে আলাদা করে অর্থ আদায় করা হবে। সেদেশের সংবাদ কনটেন্ট ব্যবহারের জন্য ৩-৫ কোটি ডলার চার্জ করা হবে।