প্রযুক্তিজগতে বর্তমানে অন্যতম আলোচিত বিষয় মেটাভার্স। অগমেন্টেড বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিভিত্তিক প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার জন্য অন্যান্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। সামগ্রিকভাবে ২০৩০ সাল নাগাদ মেটাভার্স শিল্পের মূল্য ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। এতে ফ্যাশন ও বিলাসপণ্য ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি অবদান রাখবে। সম্প্রতি চ্যালুব গ্রুপ পরিচালিত এক জরিপ সূত্রে তথ্য জানা গিয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।
বর্তমানে এ শিল্প খাতের মূল্য ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোয় মেটাভার্সের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। দুবাইভিত্তিক বিলাসবহুল খুচরা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মূলত প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ অধিকবাসী, অনুকূল নিয়ন্ত্রক পরিবেশ ও বড় বিনিয়োগের সুবিধাযুক্ত স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের কারণেই এ বিস্তার ঘটবে। ওয়েব৩-এর অন্তর্গত হওয়ায় মেটাভার্স এখন পর্যন্ত ৫৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পেরেছে।
মেটাভার্স ও নন-ফাঞ্জিবল টোকেনের গ্রহণযোগ্যতা এখনো মাঝারি আকারে রয়েছে। জিসিসির বিলাসবহুল পণ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা জরিপে অংশ নিয়েছে তারা এরই মধ্যে এসব সম্পদ ব্যবহার করছে বলে জানায়। অন্যদিকে ৫৭ শতাংশ জানায়, এগুলোর ব্যাপারে তারা আগ্রহী। মেটাভার্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি। এ প্লাটফর্মে লেনদেনের জন্য ভবিষ্যতে এটি ব্যবহার করা হবে। জিসিসি অঞ্চলে ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণের হার অনেক বেশি। অঞ্চলটির অধিবাসীদের ৪৮ শতাংশই এসব ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহার করে এবং মালিকও। চ্যালুব গ্রুপের চিফ স্ট্র্যাটেজি কর্মকর্তা জেসমিনা বান্দা বলেন, মেটাভার্সের যে কৌশল সেটি বাস্তবায়নে জিসিসির কাছে যে পর্যাপ্ত উপাদান রয়েছে তার স্পষ্ট উদাহরণ এগুলো।
তিনি বলেন, অঞ্চলটিতে যে উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো রয়েছে সেটি মেটাভার্সের পরিধি বিস্তারে শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে দেবে। পরিধি বিস্তারের এ রকম সুবিধা থাকায় মেটাভার্সে সেগুলো পরীক্ষা করা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বাভাবিক।
মেটাভার্স মূলত একটি ভার্চুয়াল জগৎ, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের অ্যাভাটার তৈরির মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এছাড়া বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠনের জন্য কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা দেবে। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েবের নতুন ধারণা হচ্ছে ওয়েব৩। এর মূল উপাদানের মধ্যে ব্লকচেইন, বিকেন্দ্রীকরণ, উন্মুক্ততা রয়েছে।
চলতি সপ্তাহে স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড উইকের এক জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ মেটাভার্স জিসিসির অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলের অর্থনীতিতে দেড় হাজার কোটি ডলার অবদান রাখবে। এর নেতৃত্বে থাকবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এ দুটি দেশ এরই মধ্যে ওয়েব৩ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিতে নীতিমালা ও ক্ষেত্র প্রণয়ন করেছে। কাতার ও বাহরাইনও এর মধ্যে রয়েছে। কুয়েত ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম অনুমোদনে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। অন্যদিকে ওমান ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ভার্চুয়াল সম্পদ পরিচালনার বিষয় অধ্যয়ন করছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসির তথ্যানুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে নতুন এ প্রযুক্তিকে ৮ থেকে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরির পথ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে যুগান্তকারী এ পরিবর্তনে কোম্পানিগুলো কেমন বিনিয়োগ করবে সেটি এখানে মুখ্য। বিলাসবহুল পণ্যের খুচরা বিক্রেতারা তাদের মুনাফা অর্জনের পথ তৈরিতে ওয়েব৩ ও মেটাভার্সে প্রবেশ করতে চাইছে।